ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

লাগাম টানতে ৩৩২ তালিকা নিয়ে মাঠে শুল্ক গোয়েন্দা

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ২৩ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লাগাম টানতে ৩৩২ তালিকা নিয়ে মাঠে শুল্ক গোয়েন্দা

নিয়মিত আমদানি হচ্ছে পেঁয়াজ। এক হিসেবে দেখা গেছে গত তিন মাসে অন্তত ১৬৭ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ এসেছে দেশের বাজারে। তবু নিয়ন্ত্রণহীন পেঁয়াজের দাম।

অভিযোগের তীর পেঁয়াজ আমদানিকারক ও মজুতদারের ওপর। অধিকাংশের ধারণা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে নিয়ন্ত্রণহীন পেঁয়াজের বাজার। এবার অন্তত ৩৩২ পেঁয়াজ আমদানিকারকে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন শুল্ক গোয়েন্দা ও অধিদপ্তর।

সংস্থাটি আমদানিকৃত পেঁয়াজ ও বাজারে সরবরাহ ইত্যাদি তথ্য-উপাত্ত খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। বাংলাবান্ধা, বেনাপোল, ভোমরা, হিলি, সোনা মসজিদ, টেকনাফ, চট্টগ্রাম ও ঢাকা কাস্টম হাউজ দিয়ে চলতি বছরের আগস্ট থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১৬৭ হাজার ৮০৬ দশমিক ৪৭ মেট্রিকটন। তারপরও অতিরিক্ত মূল্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।

প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে ৪০ আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। এদের মধ্যে ১৩ আমদানিকারককে ২৫ নভেম্বর ও ২৬ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ২৭ আমদানিকারকে। তলবকৃত চিঠিতে বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত পেঁয়াজ অবৈধভাবে মজুত করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে মানিলন্ডারিংয়েরও অভিযোগ। এ প্রেক্ষিতে ছক মোতাবেক আমদানিকৃত পেঁয়াজের বিস্তারিত তথ্যসহ উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা গেল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যেসব ব্যবসায়ী একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছে আমরা মূলত তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। এখনই কারো নাম উল্লেখ করার মতো সময় হয়নি। তথ্য-উপাত্ত ও আমদানিকারকদের বক্তব্য নিতে পারলে এ বিষয়ে পরিস্কার ধারণা পাওয়া যাবে। তবে দোষী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এনবিআর ও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুসারে আমদানিকারকের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলো- মেসার্স দিপা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আরএম এগ্রো, মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স বিএইচ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, জগদিশ চন্দ্র রায়, মেসার্স সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ, একতা শস্যভাণ্ডার, মেসার্স ফুল মোহাম্মদ ট্রেডার্স, মেসার্স ফারাহ ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ, হামিদ এন্টারপ্রাইজ, আলি রাইস মিল, নাচোল, খান টেডার্স, এসএম কর্পোরেশন, মেসার্স গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রায়হান এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সোহা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মরিয়াম এন্টারপ্রাইজ, নুর এন্টারপ্রাইজ, শামিম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স খান ট্রেডার্স, মেসার্স এমআর ট্রেডার্স, ডিএ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স টাটা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স হুদা এন্টারপ্রাইজ, আরডি এন্টারপ্রাইজ, জনী এন্টাপ্রাইজ, মাহি অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স মুক্তা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রায়হান ট্রেডার্স, মেসার্স সাইফুল এন্টারপ্রাইজ, রিজু-রিতু এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স জাবেদ অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স আলম অ্যান্ড সন্স,নিউ বড়বাজার শপিং মল, মেসার্স রচনা ট্রেডার্স, এসএস ট্রেডিং ছোট হাজি মার্কেট, সুপ্তি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ব্রাদার্স ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আল মদিনা স্টোর, লামাবাজার, বি কে ট্রেডার্স, ধ্রুব ফারিয়া ট্রেডার্স, মেসার্স সালাহ ট্রেডার্স, মেসার্স ফিরোজ এন্টারপ্রাইজ, সাদ ট্রেডার্স, আলিফ এন্টারপ্রাইজ প্রমুখ।

এসব আমদানিকারকরা ৯০০ মেট্রিকটন থেকে ৯ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি করেছে গত তিন মাসে। মূলত শুল্ক গোয়েন্দার চোখ থাকবে তাদের দিকেই। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ফারাক মাত্র দুই লাখ টনের মতো। বছরে দেশে পেঁয়াজ হয় ২৩ লাখ টনের ওপরে। আর চাহিদা রয়েছে ২৪ থেকে ২৫ লাখ টনের। তারপরও শুধু নষ্ট হওয়ার কারণে বছরে আট থেকে দশ লাখ টন আমদানী করা হয়। কারণ দেশে উৎপাদিত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত ছিল। কোনোভাবেই পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের গুদামে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আটকা পড়ে থাকায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। অতি মুনাফার লোভে অনেক ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন। আবার কয়েকজন আমদানিকারক নিজেরা বিশেষ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। গুদামে পেঁয়াজ পচে গেলেও তারা বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নেননি। ফলে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি আড়াইশ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

বাজার স্বাভাবিক করতে এমনকি গত ২২ নভেম্বর সাড়ে ১১টন পেঁয়াজ তুরস্ক থেকে আনা হয়েছে বিমানে। কিন্তু দাম কমার লক্ষণ নেই। পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বিক্রি বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থা আগের চেয়ে ১৫টি স্থান বাড়িয়ে এখন রাজধানীতে ৫০টি স্থানে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম জোরদার করেছে। সাধারণ মানুষের জন্য এই পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে।


ঢাকা/এম এ রহমান/সনি/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়