ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

লো টার্ন আউট: বিশ্লেষণে বসছে আ.লীগ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১১, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লো টার্ন আউট: বিশ্লেষণে বসছে আ.লীগ

ভোটারদের মন জয় করতে ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রচারের কমতি ছিল না। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে ভোটারদের আস্থা অর্জনে নির্বাচন কমিশনও নিয়েছিল নানা পদক্ষেপ। প্রার্থিরাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চেয়েছেন। এতকিছুর পরও ভোটের হার উল্লেখযোগ্যহারে কম হওয়ায় ভাবাচ্ছে আওয়ামী লীগকে। এজন্য লো টার্ন আউটের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দলের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের বৈঠকে চুলচেরা বিশ্লেষণের জন্য তুলছে দলটি।

দলীয় সূত্র বলছে, ভোটের হার আশঙ্কাজনকহারে কম হওয়ায় দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকেও দাবি ওঠেছে বিশ্লেষণের। কারণ দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরও একটা ভোট ব্যাংক আছে। সেই হিসেবে শুধু আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে এলেও ভোটের হার বাড়তো বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।

ভোটের উপস্থিতি কম হওয়ায় ঢাকা মহানগর নেতাদের দোষছেন অনেকে। তারা বলছেন, ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে মহানগর নেতারা কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেননি। তারা মনে করেন, এমনিতেই ভোটাররা আসবেন। ভোটার উপস্থিতি কম- ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

ভোটার উপস্থিতি নিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘মানুষ কেন ঘর থেকে বেরিয়ে ভোট দিতে যাচ্ছে না। সমস্ত শহরে গ্রামে আজকে অর্থনৈতিক জোরদার হয়েছে। আমাদের ভুল নাই তা বলব না। ভুলত্রুটি অবশ্যই আছে। সব সরকারের ভুল আছে, আমাদেরও ভুল আছে। আমি বলতে চাই কেন মানুষ আজকে অনীহা প্রকাশ করছে। নিশ্চয়ই কোনো গলদ আছে।’

তিনি বলেন, ‘এত উন্নয়নের পরে, এত সফলতার পরেও ভোট দিতে ভোটারদের কেন অনীহা হচ্ছে। কেন মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে ভোট দিতে যাচ্ছে না। এজন্য উপলব্ধি করতে হবে। আত্মউপলদ্ধি করার সময় এসে গেছে।’

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে ঢাকা সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে মতামত ও পর্যবেক্ষণ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। শনিবার ঢাকার বিভিন্ন আসনের সাংসদ ও নবনির্বাচিত দুই মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে ভোটের হার নিয়ে সবার পর্যবেক্ষণ লিখিত আকারে নিয়েছে দল। এসব বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে এসএসসি পরীক্ষার জন্য অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। পরীক্ষা না হলে অনেকেই হয়তো বাড়ি যেত না। ভোটের দিন পরিবহন সংকট ছিল। অনেকে এক এলাকার ভোটার কিন্তু চাকরির সুবাদে অন্য এলাকা বসবাস করছেন। সেক্ষেত্রে পরিবহন সংকটের কারণে দুরত্বও একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংগঠনেও কাঠামোগতভাবে কিছু দুর্বলতা আছে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতে দলের তৎপরতা ছিল না। এই বিষয়ে দলের নেতা-কর্মীদের আরো গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল। সবাই ভেবে নিয়েছেন, ভোটাররা তো ভোট দিতে আসবেন। ভোটারদেরও যে নিয়ে আসতে হবে, এই বিষয়টায় কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অনেকে ছুটি পেয়ে ঢাকার বাইরে বেড়াতে গেছেন। এসব বিষয়সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন ধরনের পর্যবেক্ষণ যুক্ত হয়েছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এসব নিয়ে বিশ্লেষণ হবে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে এসব পেশ করা হবে। 

ভোটের হার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে ভোট দিতে যাননি। ভোট পড়ার হার উত্তরে ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দক্ষিণে ২৯ শতাংশ। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার কম।

ঢাকা উত্তরে মোট ভোটার ৩০ লাখ ১২ হাজার ৫০৯ জন। ভোট দিয়েছেন ৭ লাখ ৬২ হাজার ১৮৮ জন। উত্তরে নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম ভোট পেয়েছেন ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণে মোট ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৫৯ জন। ভোট পড়েছে ৭ লাখ ১৩ হাজার ৫০টি। অর্থাৎ ৭১ শতাংশ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাননি। ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, যা মোট ভোটারের ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে উত্তরে ভোটের হার ছিল ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং দক্ষিণে ভোট পড়ার হার ছিল ৪৮ শতাংশ। সর্বশেষ গত বছরের মার্চে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচনে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। বিএনপি ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনগুলোর মধ্যে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ৭৮ শতাংশ, সিলেটে ৭৫ শতাংশ, বরিশাল ও খুলনায় ৬২ শতাংশ এবং গাজীপুরে ৫৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। অর্থাৎ সিটি নির্বাচনগুলোর মধ্যে এবারই রেকর্ড কম টার্ন আউট হলো।    

বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারাও সন্তুষ্ঠ নয় এবং ভুলত্রুটি কোথায়, সেটি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন তারা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের লো টার্ন আউট নিয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘এই বিষয়ে সামগ্রিকভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা দরকার। আমাদের দলে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। আগামী ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে আলোচনা করব। ভবিষ্যতে অতীতের ভুলত্রুটি এড়িয়ে পথ চলতে পারব।’

তবে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে তিনি বেশকিছু সমস্যার কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, ‘টার্ন আউট কম হতে পারে। কারণ ইভিএম আমাদের এখানে প্রথম অভিজ্ঞতা, পুরো ঢাকাজুড়ে ইভিএম আর আগে ব্যবহার হয়নি। নতুন সিস্টেমের একটি বিষয় আছে। ছুটির বিষয় ছিল। এসএসসি পরীক্ষার কারণে অনেকে তাদের ছেলে-মেয়েদের এজন্য গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে অনেকে। এরকম কিছু কিছু অবস্থার উদ্ভব হয়েছে। আর আমাদের মধ্যেও দুর্বলতা অবশ্যই আছে। সেটা আমারা খতিয়ে দেখব। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবো।’

 

ঢাকা/পারভেজ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়