ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

শনি গ্রহের সবচেয়ে কাছে পৌঁছাল ক্যাসিনি

মোখলেছুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শনি গ্রহের সবচেয়ে কাছে পৌঁছাল ক্যাসিনি

মোখলেছুর রহমান : নাসার মহাকাশযান ক্যাসিনিতে ধরা পড়ল শনি গ্রহ এবং তার বলয়ের মধ্যেকার রহস্যময় ফাঁকা স্থানের অত্যাশ্চর্য কিছু চিত্র।

ক্যাসিনি অতি সম্প্রতি শনি এবং তার বলয়ের মধ্যেকার রহস্যময় ফাঁকের কিছু অত্যাশ্চর্য ছবি তুলে পাঠিয়েছে।

নাসার ভাষ্যমতে, এই ছবিগুলোতে শনির বায়ুমন্ডলের এবং গ্রহটির এ যাবতকালের সবচেয়ে নিকটতম চেহারা ফুটে উঠেছে।

সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি অবধি ক্যাসিনি আরো ২১ বার এইভাবে শনির বলয় পার হবে। এরপর সমাপ্তি টানা হবে শনি গ্রহ নিয়ে গত ২০ ধরে কাজ করে চলা ক্যাসিনির অভিযান। কেননা ক্যাসিনির ট্যাঙ্কে অবশিষ্ট যে জ্বালানি রয়েছে তা দিয়ে যানটি আর বেশিদিন তার অভিযান অব্যাহত রাখা যাবে না।

তাই শনির বলয়ে ক্যাসিনির এই ২২ বারের ঝাঁপকে নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘গ্রান্ড ফাইন্যাল’। বলয়ের রহস্যময় ফাঁকা স্থানটিতে ২২ বার প্রবেশের লক্ষ্যের প্রথম প্রবেশটি ২৬ এপ্রিল ঘটে।

সে সময় মহাকাশযানটির সঙ্গে নাসার সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। যদিও নাসা পরে ঘোষণা করে যে, তারা ক্যাসিনি থেকে পুনরায় রেডিও সিগন্যাল পেতে শুরু করেছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার গোল্ডস্টোনে নাসার ৭০ মিটার প্রশস্ত ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক (ডিএসএন) অ্যান্টেনা ওই ঘটনার ৮ ঘণ্টা পরেই মহাকাশযানটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সমর্থ হয় এবং এরপর থেকেই আবারও অত্যাশ্চর্য ছবিগুলির বন্যা বয়ে যাচ্ছে

নাসা এক টুইট বার্তার মাধ্যমে এ খবরটি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে। নাসা তাদের টুইট বার্তায় জানায়, ‘অবশেষে আমরা তা করতে পেরেছি! ক্যাসিনি’র সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে এবং এটি এখন শনি এবং এর বলয়ের মধ্যেকার তথ্য পাঠাতে শুরু করেছে।’

ওয়াশিংটনের নাসা সদর দফতরের পরিকল্পনা বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক জিম গ্রিন বলেন, ‘আবিষ্কারের ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে নাসার এই ক্যাসিনি মহাকাশযান নতুন এক প্রজেক্টকে ফুটিয়ে তুলেছে, আমাদেরকে নতুন এক বিস্ময় উপহার দিয়েছে এবং সাহসী হলে যেকোনো কৌতূহলও যে আমাদের পক্ষে মিটানো সম্ভব সেটাও দেখিয়ে দিয়েছে।’



ক্যাসিনি প্রজেক্টের ম্যানেজার আর্ল ম্যাক্স বলেন, ‘এর আগে আর কোনো মহাকাশযান কখনো শনির এতো কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি। এর আগে আমরা শুধু আন্দাজের ওপর নির্ভর করতাম। শনি এবং অন্যান্য বলয়ের ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণী করতে আমরা কেবল আমাদের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করতাম।’

‘আমরা খুব আনন্দিত যে আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম শনির ফাঁকফোকর সঠিকভাবে শণাক্ত করার জন্য ক্যাসিনি ঠিক তেমনি কিছু চমৎকার আকৃতির ছবি ধারণ করে পাঠিয়েছে।’

শনির বায়ুমণ্ডল এর শীর্ষ এবং বলয়ের মধ্যকার ফাঁক প্রায় ১,৫০০ মাইল (২,০০০ কিলোমিটার) প্রশস্ত।

মহাকাশযানটি ওই অঞ্চলে প্রায় ৭৭,০০০ মাইল গতিতে যাতাযাত করে। ফলে ওই সংবেদনশীল এলাকার মারাত্মক ছোট কণা সম্ভবত মহাকাশযানটিকে অচল করে দিতে পারত। প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এবং ঢাল হিসেবে এটি তখন তার বৃহদায়তন, ডিশ-আকৃতির উচ্চ অ্যান্টেনা ব্যবহার করে।

মহাকাশযানটি ঠিক এ কারণেই বলয় ক্রসিংয়ের সময় পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের বাইরে চলে গিয়েছিল।

তবে এখন পর্যন্ত সংগৃহীত এই ছবিগুলোকে নাসা কোনো ধরনের প্রসেসিং করেনি। নাসা কেবল বলেছে যে, শনির বায়ুমন্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলো এতো কাছে থেকে এর আগে কোনো ছবিতে দেখা যায়নি।

নাসা এই ছবিগুলো নিয়ে প্রসেসিং শুরু করার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কিছুই বলা যাচ্ছে না।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গ্রহ বিজ্ঞানী ড. ইনগো মুলার-ওয়ারদার্কে এ বিষয়ে ডেইল মেইল অনলাইনকে বলেন, ‘প্রক্রিয়াকরণ করার মাধ্যমেই কেবল নাসা এর আসল তথ্য এবং ফুটেজের মধ্যে ধারণ হওয়া শব্দসমূহর মধ্যে পার্থক্য করতে সমর্থ হবে। নাসাকে তারপর উজ্জ্বল বা গাঢ় বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার জন্য চিত্রগুলোর মধ্যে হালকা তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশ্লেষণ করতে হবে।’

আগামী ২ মে ক্যাসিনির পরবর্তী প্রবেশের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে।

মহাকাশযানটি নাসা, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি এবং এসিআই রোবটিক স্পেসশিপের একটি যৌথ মিশন।

সব কিছু পরিকল্পনা মতো চললে, ক্যাসিনির জীবনাবসান ঘটবে ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। ১২,৬০০ কিলোগ্রাম ওজনের মহাকাশযানটি শনিগ্রহের দিকে তার নিয়ন্ত্রিত পতন শুরু করবে- কিন্তু শেষ মুহূর্ত অবধি পৃথিবীতে ডাটা পাঠাতে থাকবে।

ক্যাসিনি তার বিশ বছরের জীবনের শেষ পর্যায়ে আরো আশ্চর্যজনক কিছু তথ্য আবিষ্কার করবে, বলে নাসার গবেষকদের আশা। নাসার প্রজেক্ট ম্যানেজার আর্ল মেইজ বলেন, ‘আমরা জানি না এমন কিছু জিনিস আছে- যে কারণে আমরা যাত্রার শেষে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ গবেষণা করছি।’



তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ এপ্রিল ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়