ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

শহরের মাঝেই পাখির অভয়াশ্রম

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শহরের মাঝেই পাখির অভয়াশ্রম

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : সারাদিন খাল বিল জলাশয়ে বিচরণশেষে সন্ধ্যায় ফিরে আসে পাখির দল। কিচির-মিচিরে মুখরিত করে শহর আঙ্গিনা। হবিগঞ্জের জেলা পরিষদ, এম এ রব স্মৃতি পাঠাগার, জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম ও সদর থানার গাছগাছালি যেন পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়।

হবিগঞ্জ শহরের পাখিদের এই আবাসস্থল এখন সর্বজন পরিচিত। শহরের মাঝে পাখির কিচির-মিচির, অনেকের কাছেই বিষয়টি খুবই উপভোগ্য। নানা প্রজাতির পাখির দল ঝাঁক বেঁধে উড়ে আসছে নির্ভয়ে। কেউ পাখিদের ক্ষতি করছে না, জ্বালাতন করছে না। পাখিরা কোনো রকমের বিরক্তির স্বীকারও হচ্ছেনা। তাই হবিগঞ্জের এই স্থানটি পাখিদের কাছে অতি প্রিয়। তবে ওদের কাছে বেশি পছন্দের জেলা পরিষদ কার্যালয়ের গাছগুলো। পুরো রাত এখানে তারা শান্ত মনে ঘুমায়। ভোরের আলো বেরিয়ে আসতেই আবার খাদ্যের সন্ধানে ছুটে যায়।

এমন অবস্থায় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এসব পাখির জন্য এই স্থানটিকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব পাখির নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন জেলা পরিষদের এমএলএসএস পদে চাকরিরত আব্দুল কদ্দুছ। তিনি অফিস দায়িত্ব পালন শেষে পাখিদের নিরাপত্তার দিকটি দেখভাল করছেন। তার তৎপরতায় এসব পাখিকে কেউ বিরক্ত করতে পারছে না। কেউ বিরক্ত করতে চাইলে তিনি এতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এতে অবশ্য তিনি নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। জেলা পরিষদ প্রশাসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা পাখি রক্ষায় তাকে  উৎসাহ প্রদান করছেন।

আলাপকালে পাখি প্রেমিক আব্দুল কদ্দুছ বলেন, ‘পাখি প্রকৃতির অলঙ্কার। তাদের রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। তাই চাকরির দায়িত্ব পালন করে বাকী সময়টুকু পাখি রক্ষায় দিচ্ছি। তাতে টাকা পয়সা না পেলেও মনে তৃপ্তি পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘পাখির বিচরণ দেখতে অনেকেই সন্ধ্যায় আসেন। এখানের পাখির অবস্থান অবলোকন করে আগতরা মুগ্ধ হচ্ছেন।’ 

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোঃ ইয়াছিনুল হক বলেন, ‘পাখি শিকার একটি দন্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি ওই এলাকার পাখিদের উপর ঢিল ছুড়ে, কিংবা শিকার করে, তবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’জেলা পরিষদ প্রশাসক ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘গাছগুলোতে নানা প্রজাতির পাখিদের অবস্থান রয়েছে। পাখা মেলে সকাল-সন্ধ্যায় ওড়াওড়ি আর ডাকাডাকিতে এখানে প্রকৃতি পেয়েছে নতুন মাত্রা। এ অভয়াশ্রমটি ঘিরে আশপাশের এলাকার মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। এখানে এসে পাখির কোলাহল দেখে মুগ্ধ হন যে কেউ।’

মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বন্যপ্রাণী প্রকৃৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বলেন, ‘জেলা পরিষদের মেহগনি, কড়াইসহ ২০-২২টি গাছে নানা প্রজাতির পাখি বাসা বেঁধেছে । পাখি দেখতে আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন অনেকে আসছেন এখানে। পাখিগুলো যাতে টিকে থাকতে পারে এ ব্যাপারে সবার যতœবান হওয়া জরুরী।’

তিনি বলেন, এখানের মতো এতো পাখি শহরের আর কোথাও দেখা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দেশে অনেক পাখপাখালি বিলুপ্তির পথে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পাখিগুলো যাতে কেউ শিকার না করে এবং কেউ তাড়াতে না পেরে তার জন্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। তারা জানান, পাখিগুলো সময়মতো আসে আবার চলেও যায়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অন্যান্য পাখির সাথে বকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।



রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/২৩ নভেম্বর ২০১৬/মামুন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়