ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

শিক্ষাঙ্গনে পারস্পরিক শ্রদ্ধায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৩, ১৩ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিক্ষাঙ্গনে পারস্পরিক শ্রদ্ধায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে

আবরার ফাহাদ হত‌্যার পর যেন স্থবির হয়ে আছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ছাত্রদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে গত ২ নভেম্বর থেকে বন্ধ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। আন্দোলনের মুখে গত ৫ নভেম্বর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

দেশের অন‌্যান‌্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে একের পর এক আন্দোলন চলছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, নিয়োগ ও উন্নয়নকাজে ঘুষ লেনদেনসহ নানা অভিযোগ তুলছেন আন্দোলনকারীরা। সব মিলিয়ে নানা সংকট ও জটিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। চলছে অস্থিরতা।

কেন এমন অস্থিরতা, কী হতে পারে এর সমাধান? এসব বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে পারস্পরিক যে শ্রদ্ধার সম্পর্ক সেটিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে নানা অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতা বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে বাইরের বিভিন্ন অপশক্তিও অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ কাজে লাগায়। 

এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ, লাইব্রেরি ওয়ার্ক, গবেষণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদেরকেও গবেষণাকাজে যুক্ত রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এ শিক্ষক নেতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আর্থ অ‌্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন মাকসুদ কামাল বলেন, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাজে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। যাতে অন্যদিকে মনোযোগ না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষকরা যাতে নিজেদের শিক্ষার্থী বাদ দিয়ে অন্যদিকে বেশি সময় না দেন সেটিও গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম পরিবর্তনের তাগিদ দিয়েছেন এ শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, যদিও খুব অল্প সময়ে এসব করা সম্ভব নয়, তবু ধারাবাহিকভাবে যুগোপযোগী কারিকুলাম, সিলেবাস তৈরি করে যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত একাডেমিক কাজে যুক্ত রাখা যায় তাহলে অনেকাংশে অস্থিরতা কমে আসবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়ে এ শিক্ষাবিদ বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি গবেষণার প্রতি, বইয়ের প্রতি, শ্রেণিকক্ষের প্রতি আরো মনোযোগী হয় এবং শিক্ষকরাও পর্যাপ্ত সময় দেন তাহলে উভয় পক্ষের মাঝে সৌহার্দ‌্যপূর্ণ সম্পর্ক আরো বাড়বে। কাজের প্রতি বেশি সময় দিতে পারবেন তারা। তখন তারা স্বপ্রণোদিত বা অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ক্যাম্পাসে নানা অস্থির পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ পাবে না। তবে দায়িত্ববোধ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এক্ষেত্রে খুবই জরুরি।

ভিসি নিয়োগে প্রশাসনিক দক্ষতার বিষয়ে আরো গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দেন এ গবেষক। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় চেয়ারম্যান, হল প্রভোস্ট, ডিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যিনি দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে যিনি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য, আদর্শিক বিচার-বিশ্লেষণ করে তেমন ব্যক্তিকে এ জায়গায় বসানো উচিত। যাতে প্রশাসন পরিচালনা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্কের ঘাটতি না হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যদি তাদের অভিভাবকের প্রতি আস্থা না থাকে তাহলে সেখানে নানা অস্থিরতা তৈরি হয়। তখন প্রতিষ্ঠান চালানো কঠিন হয়ে যায়। তাই ভিসি নিয়োগে প্রশাসনিক ও একাডেমিক অ্যাক্সিলেন্সের দক্ষতাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অস্থিরতা কমবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে আন্দোলন হচ্ছে, সেগুলো শুধু ভিসির দুর্নীতির বিষয়কে কেন্দ্র করে হচ্ছে, এমনটা মনে করেন না মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতার পেছনে শুধু দুর্নীতি নয়, বিভিন্ন বিষয় জড়িত। এখানে শুধু এক পক্ষই নয়, দুই পক্ষের কথাই বলতে হয়। ভিসির পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে ভাষা ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে তাদের আরো সহনশীল ও মার্জিত হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবাদের জায়গা, সেখানে প্রতিবাদ হবেই। তবে সেটি একাডেমিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে যেন না হয়। এসবের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্তঃসম্পর্কে যাতে ঘাটতি না আসে বা দূরত্ব তৈরি না হয়, পরস্পরের আস্থার সম্পর্ক যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

ঢাকা/ইয়ামিন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়