ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

শিম চাষিদের সুদিন

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২০ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিম চাষিদের সুদিন

পাহাড় ও হাওর আর শহর নিয়ে হবিগঞ্জ জেলা। উৎপাদনসমৃদ্ধ এ জেলার মাটির নিচে রয়েছে গ্যাস। মাটির উপরে বারমাসই ফসল ফলে। মৌসুম অনুযায়ী ফসল চাষ করেন চাষিরা।

শীতকাল আসতেই জেলার বিভিন্নস্থানে ব্যাপকভাবে শিম চাষ শুরু হয়েছে। গাছে গাছে ফুল শোভা পাচ্ছে। তার মাঝে গাছে থোকায় থোকায় শিম। প্রতিদিনই শিমগুলো গাছ থেকে সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন চাষিরা। ভাল উৎপাদন এবং লাভ পাওয়ায় হাসি ফুটেছে শিম চাষিদের মুখে।

শিমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ও লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই এ জেলায় বাড়ছে শিমের আবাদ। জেলায় উৎপাদিত শিম শুধু দেশেই নয়, প্রতিবেশি দেশ ভারতে ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানী হচ্ছে। বলা যায়, হবিগঞ্জের শিম চাষিদের সুদিন ফিরে এসেছে। মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ করে একেক জন কৃষক মৌসুমে আয় করছেন অন্তত ১২ হাজার টাকা। ফলে এখানকার কৃষকরা খুবই খুশী।

এ মৌসুমে জেলার বাহুবল, হবিগঞ্জ সদর, নবীগঞ্জ, মাধবপুর উপজেলাসহ বিভিন্নস্থানে ১৩ হাজার ৮৬ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। শুরুতে চাষিরা প্রতি কেজি শিম ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা হারে বাজারে বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে পাইকারী বাজারে ৪৫/৫০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এর মূল্য দ্বিগুণ হয়।

কৃষকরা জানান, বছরের মে-জুন মাসে শিমের আগাম চাষ শুরু হয়। এ সময় শিমের কেজি ১৫০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। এদিকে সাধারণত মৌসুম ভিত্তিক আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে শিমের আবাদ শুরু হয়। আবার শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে ফলন আসে এবং তা বাজারজাত করা হয়। এ উৎপাদন বিরামহীনভাবে মার্চ মাসে গিয়ে শেষ হয়।

হবিগঞ্জে আশ্বিনা, কাকিয়া, বোয়ালগাদা, বারি-১, বারি-২ সহ কয়েকটি জাতের শিমের আবাদ বেশি হয়। তবে শিমের কাঁচা ও শুকনো বীজের চাহিদাও বেশি। তেমনি শিমের মৌসুমে কাঁচা বীজ খুচরা বাজারে ১০০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মৌসুম শেষে শুকনো বীজের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়।

জেলায় প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজারেরও বেশি চাষি শিমের আবাদ করে থাকে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৬ হাজার চাষি রয়েছেন যারা বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষ করে আসছেন। তাদের খামারে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ হাজার শ্রমিক প্রতিনিয়িত কাজ করছেন। কৃষি বিভাগের দাবি, তারা কৃষকদের এই সাফল্যে যথাসময়ে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছেন।

জেলার সবচেয়ে বড় শিমের বাজার বসে বাহুবল উপজেলার দিগাম্বরে। সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বেশি পরিমাণে কাঁচা মাল এই বাজারেই বিক্রি হচ্ছে। শিম ছাড়াও এ বাজারে নানা ধরনের সবজি পাওয়া যায়। প্রায় ১৪ বছর ধরে এ বাজার বসে আসছে। এ বাজারের পাশেই শিম বাগান রয়েছে। প্রতি বছর এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ অঞ্চলের চাষি হামদু মিয়া (৫২) রাইজিংবিডিকে বলেন, এ বছর শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এই বাম্পার ফলন। এতে করে চাষিদের মাঝে বিপুল উৎসাহ দেখা দিয়েছে। পূর্বে এসব জমিতে ধান চাষ হতো। ভাল ফলন পাওয়ায় এখন চাষিরা শিম চাষে মনযোগ দিয়েছেন।

দিগাম্বর বাজার এলাকার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা এখন শিমের জমিতে শ্রমিক নিয়ে পরিচর্যায় ব্যস্ত। আবার কেউ ব্যস্ত শিম সংগ্রহে। যেদিক চোখ যায়, সেদিকেই শিম বাগান। যেন চা-বাগানের ন্যায় এখানে শিম বাগান তৈরি হয়েছে।

শিম চাষি জমির আলী (৬০) রাইজিংবিডিকে জানান, ২০০০ সালে থেকে শিম চাষ শুরু করেছেন। এরপর থেকে তার শিমের ফলন ভালো এবং প্রতি বছর এর আবাদ বাড়ছে।

শিম চাষি ফিরোজ মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, বছরের ৭ মাস শিমের উৎপাদন হয়। কিন্তু পানির অভাবে শেষ সময়ে শিমের উৎপাদন কমে যায়।

কৃষক দুলাল মিয়া রাইজিংবিডিকে জানান, তিন বিঘায় শিম আবাদে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতে কমপক্ষে দুইলাখ টাকার উপরে আয় করতে পারবেন তিনি। তাদের উৎপাদিত শিম শুধু দেশেই নয়, ভারত, মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হচ্ছে। তার মতে, হবিগঞ্জে উচ্চ ফলনশীল জাতের শিম বীজের অভাব রয়েছে। যার ফলে আশনুরুপ ফলন পাওয়া কঠিন হচ্ছে।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তফিজ উদ্দিন খান রাইজিংবিডিকে বলেন, জেলায় শিমের আবাদ প্রতি বছরই বাড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার জেলায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ সবজির আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় শিমের উৎপাদন বাড়ছে। কৃষকদেরকে পরামর্শসহ কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এ মৌসুমে ১৫ হাজার ২৪৬ মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন- হবিগঞ্জের সবজির মধ্যে টমেটো, শিমসহ কয়েক প্রকার সবজি মালোয়েশিয়া, ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করছে পাইকাররা।



হবিগঞ্জ/মামুন/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়