ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিলংয়ের ‘তীর’ রুখতে হার্ডলাইনে পুলিশ

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১১ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিলংয়ের ‘তীর’ রুখতে হার্ডলাইনে পুলিশ

পুলিশের অভিযান সিলেট নগরী থেকে আটককৃত ৩৪জন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট: ‘শিলংয়ের তীর’। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে এ খেলার উৎপত্তি। এটি এক ধরনের জুয়া। বেশ কয়েক বছর ধরে ওপারের এ ‘তীরে’ বিদ্ধ হচ্ছেন এপারের মানুষ।

বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন উপজেলায় এ জুয়া মহামারি আকার ধারণ করেছিল। একই সাথে নগরীতেও তীর চক্রের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল।

তবে প্রশাসনের তৎপরতায় এ চক্রটি এখন অনেকটাই দমে গেছে। তারপরও গোপনে নানা কৌশলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আসর বসিয়ে শিলংয়ের তীরে বিদ্ধ করে চলছে মানুষজনকে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বুধবার রাতে নগরীর তালতলা এলাকায় এমনই একটি আস্তানার খোঁজ পায়। সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ৩৪জনকে। সেখান থেকে জুয়ার নগদ ৬৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। একই সাথে জব্দ করা হয় টোকেন, খাতাসহ নানা জুয়া সরঞ্জামও।

পুলিশ বলছেন, ‘শিলংয়ের তীর’ বন্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছেন তারা। তবে এটি একটি সামাজিক সমস্যাও। সেক্ষেত্রে জনসাধারণকেও এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য প্রশাসনকেও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।’

এ ছাড়া যেসব ওয়েবসাইটে ‘তীর শিলং’ খেলা পরিচালনা করা হয় তা বন্ধে বিটিআরসির কাছে আবেদন করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, সিলেট নগরীর পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন চায়ের দোকানে বসে তীর শিংলয়ের এজেন্টরা তাদের বুকিং কার্যক্রম চালাতেন। আর ৭০ গুণ পাওয়ার আশায় তাদের তীরে বিদ্ধ হতেন দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিকশাচালক থেকে শুরু করে তরুণরাও। এসব আসরে তীরে বিদ্ধ বেশিরভাগই টাকা খুঁইয়ে ফিরতেন বাসায়। ফলে অনেকেই এ খেলা খেলে নিঃস্ব হয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েও পড়তেন। পাশাপাশি পারিবারিক কলহও লেগে থাকত প্রায়ই।

প্রশাসনের কড়া নজরদারীর কারণে আগের মতো প্রকাশ্যে এজেন্টরা বুকিং কার্যক্রম না চালালেও নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় তাদের আস্তানা থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। এরমধ্যে নগরীর কাজিরবাজার, তালতলা নন্দিতা সিনেমা হল এলাকা, সুরমা মার্কেট, কুয়ারপাড়, বন্দরবাজারের হকার্স মার্কেট এলাকা, ঘাসিটুলা, খাসদবির, কদমতলি বালুরমাট, আখালিয়াসহ বেশ কিছু স্পটে প্রতিদিনই শিলংয়ের জুয়ার আসর বসে থাকে।

সম্প্রতি তীর শিলংসহ সবধরণের অপরাধ প্রবণতার বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাওয়ায় তা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। সর্বশেষ তালতলা এলাকা থেকে এ ৩৪জনকে আটক করা হলো।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. জেদান আল মুসা বলেন, ‘শিলংয়ের তীর খেলা মূলত ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এজন্য যেসব ওয়েব সাইটের মাধ্যমে এ খেলা হয়, সেসব সাইট বন্ধে বিটিআরসির কাছে আবেদন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তীর শিলং বন্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছেন তারা। তবে এটি একটি সামাজিক ব্যধিও। এজন্য সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে তা নির্মূল করতে হবে। এজন্য তিনি সিলেটবাসীর সহযোগীতাও চেয়েছেন।’

পুলিশ কর্মকর্তা জেদান বলেন, ‘পুলিশের অভিযানে যারাই আটক হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া অভিযানে জুয়ার আস্তানাও ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।’

সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে তালতলা থেকে আটক ৩৪জনকেও মামলা দিয়ে বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তীর খেলা বন্ধে সীমান্তবর্তী থানাগুলোর কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা আছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে অভিযানও অব্যাহত রয়েছে বলে সিলেট জেলা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

জানা যায়, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুয়ার আসরটি পরিচালনা করা হয়। প্রতিদিন বিকেল সোয়া ৪টা এবং সাড়ে ৫টায় দুইবার লটারির ড্র হয়। লটারি বিজয়ী তার বাজির টাকার ৭০গুণ বেশি পেয়ে থাকেন এজেন্টদের কাছ থেকে। বর্তমানে নাইট শিলং নামে রাতেও এ জুয়ার ড্র হয়ে থাকে।

তীর শিলং লটারিতে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত যে কোনো সংখ্যা কিনে নেওয়া যায়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা যায়। লটারিতে একটি নম্বরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

বিজয়ীদের টাকার পরিমাণ কম হলে তা তত্ক্ষণাৎ পরিশোধ করা হয়, আর বেশি হলে ভারত থেকে এনে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সময় নেওয়া হয় তিন থেকে সাত দিন। জুয়ার টাকা ভারত ও বাংলাদেশে হুন্ডি ও সীমান্তের চোরাপথে লেনদেন হয়।

 

রাইজিংবিডি/ সিলেট/ ১১ জুলাই ২০১৯/ আব্দুল্লাহ আল নোমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়