ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শিশু আইনে বিচারে হাইকোর্টের সাত দফা নির্দেশনা

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১০, ২১ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশু আইনে বিচারে হাইকোর্টের সাত দফা নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিশু আইনে অসঙ্গতি, অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি থাকায় এই আইনে বিচারের ক্ষেত্রে শিশু আদালতের বিচারক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিশু আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

পুরান ঢাকার মো. ওসমান হত্যা মামলার আসামি শিশু মো. হৃদয়ের জামিন আবেদন নিয়ে এক রায়ে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেন।

নির্দেশনাগুলো হলো-

১. সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কেবল মামলার তদন্ত কার্যক্রম তদারক করবেন এবং এ সংক্রান্ত নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজনীয়  আদেশ এবং নির্দেশনা দেবেন। 

২. রিমান্ড সংক্রান্ত আদেশ শিশু আদালতেই নিষ্পত্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু (ভিকটিম এবং সাক্ষী) বা আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুর জবানবন্দি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট লিপিবদ্ধ করতে পারবেন।

৩. তদন্ত চলাকালীন আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুকে মামলার ধার্য তারিখে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজিরা হতে অব্যাহতি দেয়া যেতে পারে।

৪. তদন্ত চলাকালে আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুর  রিমান্ড, জামিন, বয়স নির্ধারণসহ অন্তর্বর্তী যেকোনো বিষয় শিশু আদালত নিষ্পত্তি করবে এবং এ সংক্রান্ত যেকোনো আবেদন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল হলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট  নথিসহ ওই দরখাস্ত সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে প্রেরণ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট শিশু আদালত ওই বিষয় নিষ্পত্তি করবেন।

৫. অপরাধ আমলে নেয়ার আগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল শিশু আইনের অধীনে কোনো আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে ‘শিশু আদালত’ হিসেবে আদেশ প্রদান করবে এবং এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞ বিচারক শিশু আদালতের বিচারক হিসেবে কার্য পরিচালনা এবং শিশু আদালতের নাম ও সিল ব্যবহার করবেন।

৬. আইনের সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি হলো এই যে, আইন মন্দ বা কঠোর হলেও তা অনুসরণ করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা সংশোধন বা বাতিল না হয়। নালিশি মামলার ক্ষেত্রে শিশু কর্তৃক বিশেষ আইনসমূহের অধীনে সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল শিশু আইনের বিধান ও অত্র রায়ের পর্যবেক্ষণের আলোকে অভিযোগ গ্রহণের পর প্রয়োজনীয় আইনি কার্যক্রম গ্রহণের পরে অপরাধ আমলে গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কাগজাদি (নথি) সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাবে। পরে ম্যাজিস্ট্রেট  অপরাধ আমলে নেয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান এবং অপরাধ আমলে নিলে পরবর্তীতে কাগজাদি বিচারের জন্য শিশু আদালতে পাঠাবেন।

৭. শিশু আইনের প্রাধান্যের কারণে বিশেষ আইনসমূহের অধীনে জিআর মামলার ক্ষেত্রে শিশু কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের জন্য পৃথক পুলিশ রিপোর্ট দেয়ার বিধান থাকায় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে অপরাধ আমলে নেবেন।

হাইকোর্ট রায়ে আরো বলেছেন, দৈনন্দিন বিচারিক কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে এ কথা উচ্চারণে আমাদের দ্বিধা নেই যে, শিশু আইন ও আদালত নিয়ে বর্তমানে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগে এক ধরনের বিচারিক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শিশু আইনে সাংঘর্ষিক অবস্থা, বিদ্যমান অসঙ্গতি, অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি অবিলম্বে দূর করা প্রয়োজন। আদালত এটাও প্রত্যাশা করছে যে, এ লক্ষ্যে সরকার দ্রুততার সঙ্গে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এই রায় ও আদেশের কপি প্রয়োজনীয় অবগতি ও ব্যবস্থা  গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালত/ট্রাইব্যুনালসহ সমাজকল্যাণ ও আইন সচিব এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ আগস্ট ২০১৯/মেহেদী/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়