ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিশুকে শেখান শেয়ারিং

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২২ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুকে শেখান শেয়ারিং

প্রতীকী ছবি

ঝুমকি বসু : দীপ্ত বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। কোনো ভাই-বোন না থাকায় কারো সঙ্গেই কোনো কিছু ভাগ করে নিতে হয়নি এতদিন। খেলনা, জামা-কাপড়, খাবার জিনিস সবকিছুতেই ছিল তার একক আধিপত্য। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর। স্কুলে দীপ্তর বেশ কয়েকজন বন্ধু হলো। তারা মাঝেমাঝে বাসায়ও আসতে শুরু করলো। বন্ধুরা এলেই দীপ্তর খেলনা নিয়ে খেলতে চায়, তার চকলেটে ভাগ বসাতে চায়। কিন্তু তা দেখে ও ক্ষেপে আগুন হয়ে যায়। বন্ধুদের কিছুতেই তার খেলনা ধরতে দেবে না, খাবারের ভাগও দেবে না। ওরা জোর করে নিতে গেলেই লেগে যাচ্ছে মারামারি। ছেলের এমন আচরণে ওর বন্ধুর মায়েদের সামনে বিব্রতবোধ করে দীপ্তর বাবা-মা।

চার দেয়ালের মধ্যে একটুকরো নিজের জগৎ। সদস্য কেবল বাবা-মা, কম্পিউটার আর মোবাইল ফোনের কার্টুনের চরিত্র। আমাদের বেশিরভাগ শিশুদের দিনগুলো এভাবেই কেটে যায়। শিশুদের রোজকার রুটিনের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, সারাক্ষণই আমরা শুধু ‘নেওয়ার’ ওপর জোর দিই। যেমন ধরুন, অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় সন্তানের জন্য কয়েকটা চকলেট আনলেন। হাতে দিয়েই বলেন- একটা খেয়ে বাকিগুলো রেখে দিও। এগুলোর থেকে অন্য কাউকে একটা দেওয়ার কথা কিন্তু আমরা তেমনভাবে বলি না। কিংবা দোকানে গিয়ে যখন খেলনা কিনি, তখন শুধু ওর জন্যই কেনার কথা ভাবি। অন্য কারো জন্য ওকে বাছাই করতে বা পছন্দ করতে কখনোই তাকে শোনাই না।

আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিজেরাও হয়ে পড়েছি আত্মকেন্দ্রিক। সারাক্ষণ নিজেরা কেমন থাকলাম, তাই নিয়েই ব্যস্ত থাকি। আমাদের থেকে যারা খারাপ অবস্থায় রয়েছে, তাদের সঙ্গে নিজেদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার কথা ভুলক্রমেও ভাবি না। সেই মানসিকতার প্রভাব পড়ে সন্তানের উপরেও। তাই ওরাও ওদের জগতে এমন আচরণই করে। সেইজন্যই ছোট থেকে শিশুদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া বা অন্যকে দেওয়ার যে আনন্দ, সেই বোধটা গড়ে ওঠে না। কীভাবে গড়ে উঠবে এমন শেয়ারিং মনোভাব? রইল কিছু পরামর্শ।

* শিশুকে ছোট থেকেই বোঝান, কোনো কিছু অন্য কাউকে দেওয়া মানেই নিজের ভাগের থেকে কমে যাওয়া নয়।

* সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ওর কাজিন বা বন্ধুদের জন্য উপহার কিনুন। উপহার পছন্দ করার সময় ওর মতামতও নেবেন।

* আপনার যদি একের অধিক সন্তান থাকে, তাহলে আপনার পক্ষে দায়িত্ববোধ গড়ে তোলাটা একটু সহজ হবে। একজনের হাতে খাবার জিনিস বা খেলনা কিনে দিয়ে বলবেন ভাই-বোনের সঙ্গে সেসব ভাগ করে নিতে। এতে ওর মনের পরিধিটা বড় হবে।

* আমরা আমাদের শিশু সন্তানদের জন্য অনেক জামাকাপড় বা খেলনা কিনে থাকি। শিশুকে শেখাবেন যেন সব যত্ন করে রাখে। ওর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সেগুলো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাজে লাগবে, ছোট থেকেই এই বোধ ওর ভেতর গেঁথে দিন। ওর অপ্রয়োজনীয় জিনিস ওর হাত দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দিতে চেষ্টা করুন।

* আপনি নিজেও আপনার পুরোনো জিনিস, যাদের প্রয়োজন আছে তাদের দিয়ে ওর সামনে নিজেকে রোলমডেল হিসাবে গড়ে তুলুন।

* একা একা খেলার চাইতে বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে খেলায় আনন্দ বেশি, সেটা ওকে বুঝিয়ে বলুন।

* সন্তানকে বোঝান বন্ধুরা বাসায় এলে ও যদি খেলনা না দেয় তাহলে ও যখন বন্ধুদের বাসায় যাবে, তখন তারাও ওকে তাদের খেলনা দেবে না।

* শেয়ার করা নিয়ে সন্তানের সঙ্গে জোরাজুরি করবেন না, কারণ তাতে ওর জিদ বেড়ে যাবে। শেয়ারিং ব্যাপারটা ভেতর থেকে গড়ে তোলার বিষয়। তাই ভেতর থেকে এই বোধ গড়ে তুলতে না পারলে শত চেষ্টাতেও কোনও লাভ হবে না।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়