ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ঝিমিয়ে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৩, ৩১ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঝিমিয়ে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম

এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মশক নিধনে গুরুত্বারোপসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছিল এ দুই সিটি। তবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। গত দুই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও ঝিমিয়ে পড়েছে মশক নিধন কর্যক্রম। এ কারণে আসন্ন শীত মৌসুমে ডেঙ্গু বাড়ার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।

নগরবাসীরা বলছেন, ডেঙ্গু আতঙ্ক বাড়ার পর সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীরা কিছুদিন মশক নিধনে ওষুধ প্রয়োগ করেছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তাদের দেখা পাওয়া যায়নি।  ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাওয়ায় মশক নিধন কার্যক্রমে গতি কমেছে। যদিও দুই সিটি করপোরেশন ঘোষণা দিয়েছিল ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে বছরজুড়ে কাজ করবে তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগের প্রকোপ যেকোনো সময় বাড়তে পারে।  তাই অবহেলা না করে সারা বছর মশক নিধনসহ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। তবে দুই সিটি করপোরেশন দাবি করেছে, তারা মশক নিধনে পর্যাপ্ত কাজ করেছে ও করছে।

জানা গেছে, মশক নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দুই দফা চিরুনি অভিযান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসায় বাসায় তল্লাশির পর আর কোনো কাজ হয়নি। চিরুনি অভিযান ও বাসায় বাসায় তল্লাশির মতো কার্যক্রমও শেষে দিকে চলছে ধীর গতিতে।

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জানান, চলতি বছরের ২২ জুলাই থেকে অক্টেবরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের কর্মীরা দুই লাখ ১৫ হাজার বাড়ি পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।  সেগুলো ধংস করা হয়। পাশাপাশি নির্মাণাধীন প্রায় পাঁচ হাজার ভবন পরিদর্শন করা হয়। এর মধ‌্যে দুই শতাধিক বাড়িত এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।  সেখান থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে।

মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত আছে জানিয়ে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন জানান, দুই দফায় চিরুনি অভিযান চালিয়ে প্রায় আড়াই লাখ বাড়ি পরিদর্শন করে আড়াই হাজার বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।

মশক নিধনে লোকবলের অভাব

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর আরো ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত করা হয়।  এতে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির আয়তন বেড়েছে। কিন্তু এর তুলনায় মশক নিধনে লোকবলের অভাব রয়েছে। এছাড়া ওষুধ ছিটানোর জন্য ফগার মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে।

দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯ টি ওয়ার্ডের জন্য মশক নিধন কর্মী রয়েছে ৭০৯ জন।  এর মধ্যে ডিএনসিসিতে কাজ করেন ২৭০ জন।  ফলে কার্যক্রম ঠিক মতো চালাতে হিমশিম খেতে হয়। যদিও ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ও মশাবাহিত রোগের প্রকোপ কমাতে তিনি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আরো ৬২০ জন কর্মী নিয়োগ দেবেন।

মশক নিধনে নগরবাসীর পর্যবেক্ষণ

ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা আসিফুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মশার ওষুধ ছিটানোর তৎপরতা দেখা গেলেও এখন আর নেই।  এখন সারা এলাকা খোঁজেও ওষুধ দিতে কাউকে পাওয়া যাবে না।

একই এলাকার তৌফিক ইসলাম বলেন, যখন প্রচুর সমালোচনা হয়, তখন সিটি করপোরেশনের মনে হয় কিছু করা দরকার। তার আগে তারা এসব বিষয়ে চিন্তা করে না।

মিরপুর-১০ এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ড্রেনের দিকে তাকান, কাজ করছে কী না সেটা বুঝতে পারবেন।

শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা আবুল কালম বলেন, ডেঙ্গুর ব্যাপকতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযান জরিমানা দেখলাম। এখন কিছুই নেই। গত দুই মাসে আমার বাসা আশপাশে সিটি করপোরেশনের কর্মী দেখিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. উল্লাহ মুন্সি বলেন, সারা বছর এডিস মশা নির্মূল করা না গেলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। কারণ ডেঙ্গু মশার ডিম এক বছর পর্যন্ত পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে পারে।  আরা পানির স্পর্শ পেলে সেটি ফুটে লার্ভা তৈরি করতে পারে।

ডেঙ্গু মাত্রা কমেছে ভেবে মশক নিধন কার্যক্রম বন্ধ না রেখে সারা বছর গুরুত্বের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন তিনি।


ঢাকা/নূর/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়