ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শেবাচিম হাসপাতালে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী

জে.খান স্বপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শেবাচিম হাসপাতালে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা সেবায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল।

দেখা যায়, হাসপাতালের আন্তঃ বিভাগে শনিবার ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এ সময় চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৯৭৯ জন রোগী। যা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৯৭৯ রোগীর মধ্যে সর্বোচ্চ ভর্তি রয়েছেন ৪৯১ জনই শিশু রোগী। এছাড়া মেডিসিন ৪টি ইউনিটে রয়েছেন ৪৫৬ জন ও সার্জারি বিভাগে ৪টি ইউনিটে রয়েছে ২৭২ জন। পাশাপশি ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন ১৮৩ জন।

দুঃখজনক সত্য এই যে, সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা সেবায় রেকর্ড সৃষ্টিকারী বৃহৎ হাসপাতালটিতে চিকিৎসক সংকট চরমে। অর্ধেকেরও বেশি চিকিৎসক পদ শূন্য। চিকিৎসক কর্মকর্তাসহ ২২৪টি পদের বিপরীতে তিন শিফটে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৯৯ জন চিকিৎসক।

সূত্র মতে, ১৯৭০ সালে ৩২৪ শয্যায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ৫০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালটিকে ১০০০ হাজার শয্যায় উন্নীত করেন। হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের সেবায় আউটডোর-ইনডোরে মোট ২৮টি বিভাগে রয়েছে ৪৪টি ইউনিট।

দিন যতই বাড়ছে ততই রোগী সংখ্যা বাড়ছে। তাই আইসিইউ, স্ক্যানু (এনআইসিইউ), বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি, কার্ডিওলজি, মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন, গ্যাসট্রো এ্যানটোলজি, নেফ্রোলজি, জেনারেল সার্জারি, নিউরো সার্জারি, পেডিয়াটিক সার্জারি, ইউরোলজি, চক্ষু, নাক-কান-গলা, অর্থোপেডিক, গাইনি, আবস্টোট্রিকস, শিশু রোগ, নিউনেটোলজি, আইসোলেশন ও মানসিক রোগ বিভাগে শয্যা না পেয়ে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে হাসপাতালের মেঝে কিংবা ফ্লোরে।

হাসপাতালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকেন। কিন্তু চলতি বছরে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই বছর সেবা নেয়া রোগীর সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। যার অন্যতম উদাহরণ শনিবারের ২৪ ঘন্টার রেকর্ড (১৯৭৯ জন) ।

এর পূর্বে গত ২০ আগস্ট ১৮৫১ জন, ২১ আগস্ট ১৮৯৩ জন, ২২ আগস্ট ১৮৫৭ জন এবং ২৩ আগস্ট ১৮২৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।

২০১৩ সালে হাসপাতালটিকে হাজার শয্যায় উন্নতির ঘোষণা দেয়া হলেও বিগত ৭ বছর ধরে ৫শ শয্যার অর্গানোগ্রামেই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। সেখানে চিকিৎসক থেকে শুরু করে ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরও তীব্র সংকট।

হাসপাতালে বহিঃবিভাগে চিকিৎসক সংকট কিছুটা কম থাকলেও আন্তঃবিভাগে এ সংকট আরো চরমে। সেখানে ৩৩ জন রেজিস্ট্রার পদের ১৮টি, ৬৬টি সহকারী রেজিস্ট্রার পদের ৪৮টি, ১০টি এ্যানেসথেসিওলজিষ্ট পদের ৪টি, ১০টি ইএমও পদের ২টি, ২০টি মেডিকেল অফিসার পদের ১৮টি এবং ২০টি ইনডোর মেডিকেল অফিসার পদের ১১টিই শূন্য রয়েছে।

একই অবস্থা বিরাজ করতে হাসপাতালটির আউটডোরেও। প্রতিদিন আউটডোরে ৩ হাজারের অধিক রোগীর সেবা প্রদান করছেন হাতে গোনা কয়েকজন চিকিৎসক। বহিঃবিভাগের ৪৬ জন এম.ও, সহকারী সার্জন, ডেন্টাল সার্জনের মধ্যে ২২টি পদ শূন্য। এমনি প্যাথলজি বিভাগের ৮টি ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদের ৩টি পদই শূন্য। আর সেখানেই প্রতিদিন গড়ে ৫শত রোগীর রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে।

হাসপাতালের ২য় শ্রেণির নার্স ও কর্মকর্তাদের ৮০৬টি বিভিন্ন পদের মধ্যে মাত্র ৩৭টি পদ শূন্য থাকলেও ৩য় শ্রেণির ১০২টি পদের মধ্যে ৩১টি ও ৪২৬টি ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদের মধ্যে ১১৮টি পদ শূন্য রয়েছে।

বিপুল পরিমাণের রোগী ও তাদের সেবার দায়িত্বে থাকা পদের অর্ধেকেরও কম চিকিৎসকসহ জনবল নিয়ে সাধ্য অনুযায়ী সেবা প্রদান করা হচ্ছে বলে দাবী করেছেন হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন।

তিনি বলেন, ‘দিনে দিনে রোগী সংখ্যা বাড়বে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু চিকিৎসক সংকট বাড়বে তা অস্বাভাবিক। তিন শিফটে চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করে ক্লান্ত হচ্ছেন। তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দায়িত্ব পালন করার মতো আমাদের কেউ থাকবেন না। চিকিৎসক সংকট দূর করার জন্য একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে কিন্তু এর কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। আর এই সংকটের কারণেই হাসপাতালের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তবুও আমরা আমাদের চেস্টা অনুযায়ী সেবা প্রদান করছি।’ 

 

রাইজিংবিডি/বরিশাল/২৫ আগস্ট ২০১৯/জে. খান স্বপন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়