ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শেষ পর্যন্ত ভোটযুদ্ধে মিলন, নেই নেতারা

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শেষ পর্যন্ত ভোটযুদ্ধে মিলন, নেই নেতারা

নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত ভোটযুদ্ধে থাকতে চান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। মহাজোটের শরিক হিসেবে নৌকার সমর্থনে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কথা উঠলেও শেষ পর্যন্ত মাঠেই থাকছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারি দলের শীর্ষমহলের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচন থেকে সরছেন না আমাদের প্রার্থী। সিদ্ধান্ত হয়েছে শেষ পর্যন্ত মিলন নির্বাচন করবেন।’

তিনি বলেন, যে কোন অজুহাতে বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন করে, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও যদি মাঠে না থাকে, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। দেশ বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। ঝুঁকি এড়াতে মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করেই জাতীয় পার্টি সরে যাওয়ার পরিবর্তে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাপার মেয়র প্রার্থী সাইফুদ্দিন মিলন নিজে বলেন, ‘না, আমি সরে যাচ্ছি না। শেষ পর্যন্ত ভোটযুদ্ধে আছি।’

মিলন আরো বলেন, ‘গত সিটি নির্বাচনেও আমার বিরুদ্ধে এ ধরণের ষড়যন্ত্র হয়েছে। বসে গেছি বলে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আমি যে কোন মূল্যে ভোটের মাঠে আছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমিই বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।’

মিলনের পাশে নেই কেন্দ্রীয় নেতারা:

এবার নির্বাচন করার কোন ইচ্ছা ছিল না ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনের। কিন্তু প্রার্থী সংকটের কারণে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের অনুরোধে তিনি প্রার্থী হয়েছেন।

মিলনের ঘনিষ্ঠ পার্টির মহানগরীর এক শীর্ষপর্যায়ের নেতা বলেন, গতবার নির্বাচনে নামিয়ে মিলনকে অসম্মান করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা পাননি, তাই এবার তিনি কোনভাবেই নির্বাচন করতে চাননি। কিন্তু দলের স্বার্থে চেয়ারম্যানের অনুরোধে তিনি প্রার্থী হন। দল থেকে বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে। সমঝোতা হলে হয়তো তিনি মেয়র হবেন, না হয় কিছু কাউন্সিলর নিয়ে শর্ত সাপেক্ষে মিলন প্রত্যাহার করে নেবেন। কিন্তু এবার কোনটাই হয়নি। মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা হলেও তারা ছাড় দেয়নি জাতীয় পার্টিকে। প্রত্যাহারের সময়ও চলে যায় মিলনের। ফলে, বাধ্য হয়ে দলের সম্মান বাঁচাতে তাকে নির্বাচন করতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সোমবার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের সময় সাইফুদ্দিন মিলন বলেন, আমরা শরিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা চেয়েছিলাম, কিন্তু হলো না। বলেছিলাম, দক্ষিণের মেয়র দেন, না হয় দুই সিটিতে কিছু কাউন্সিলর দেন, কিন্তু তারা রাজি হননি। বাধ্য হয়ে নির্বাচন করছি।

অভিযোগ উঠেছে, মিলনের গণসংযোগে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, এমনকি মহানগরীর নেতাকর্মীরাও থাকছেন না। কেন্দ্রীয়ভাবে কোন সহযোগিতাও করা হচ্ছে না। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ পর্যন্ত একটাকাও দেননি। কারো কাছ থেকে কোন সহযোগিতাও পাচ্ছেন না। মিলন তার সামর্থ্য অনুযায়ী পোষ্টার-ব্যানার ও গাড়ির বহর নিয়ে যেভাবে পারছেন গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মিলনের নির্বাচনে সম্পৃক্ত জাপা নেতারা বলেন, নির্বাচনে নেমে মিলন অসহায় হয়ে পড়েছেন। তিনি এখন পরিস্থিতির শিকার। নেতারা পাশে নেই, টাকাও নেই, সহযোগিতা নেই, এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন করছেন তিনি।

তারা বলেন, নির্বাচনে মিলন কত ভোট পেল তা বড় কথা নয়, নির্বাচন না করলে নৌকা-ধানের শীষের মাঝে হারিয়ে যেত এরশাদের লাঙল। তাই যার যতটুকু সামর্থ আছে, তাই নিয়ে মিলনের পাশে থাকা উচিত।

জানা গেছে, মিলনের বিজয় সুনিশ্চিত করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, কমিটির সদস্য প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, আলমগীর সিকদার লোটন, জহিরুল ইসলাম জহির, সদস্য সদস্য সচিব জহিরুল আলম রুবেলসহ গুটিকয়েক কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়া তেমন কেউ তার নির্বাচনে নেই। কমিটির বৈঠকেও এসব নেতারা আসেন না। কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে দায়িত্ব পালন না করলে অ্যাকশন নেয়ার কথা, কিন্তু পার্টির চেয়ারম্যান এখনো কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিদিন বনানীতে বসছেন, কিন্তু কেউ তার নির্বাচনে আসছেন না। খবরও নিচেছন না। নেতাদের কেউ কেউ লাঙল বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করছেন। এ নিয়ে খোদ মেয়র প্রার্থী মিলন তার ঘনিষ্টজনদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি তাদের বলেছেন, কী কারণে আমাকে মাঠে নামিয়ে এভাবে বেইজ্জত করা হচ্ছে। দলের স্বার্থে তিনি নেতাকর্মীদের লাঙলের পক্ষে একাট্টা হওয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন।

 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়