ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শোভন-রাব্বানী নেতৃত্ব বিপর্যয়: চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শনিবার

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৬, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শোভন-রাব্বানী নেতৃত্ব বিপর্যয়: চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শনিবার

এসকে রেজা পারভেজ: অভিযোগের পাহাড় জমেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বোচ্চ দুই নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভারে টালমাটাল সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে এখন নেতৃত্ব পরিবর্তণের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে শুদ্ধ হওয়ার একটা সুযোগও দেয়া হতে পারে। যদিও এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা। 

দলীয় সূত্র বলছে, কমিটি গঠনের পর থেকে ছাত্রলীগের দুই নেতা সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ এবং গোয়েন্দা রিপোর্ট মিলে বিস্তর অভিযোগ জমেছে সংগঠনটির সাংগঠনিক নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে।

এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন, দিনের অর্ধেকটা সময় ঘুমিয়ে কাটানো, সাংবাদিক বা শীর্ষ নেতাদের ফোন না ধরা, মেয়ে আর মাদক নিয়ে পড়ে থাকা, টেন্ডার বাণিজ‌্যে জড়িয়ে পড়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো। এসব অভিযোগের প্রমাণিত রিপোর্ট এখন নেত্রীর হাতে। গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড বৈঠকে ছাত্রলীগের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।

এরই মধ্যে কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে নেতা হওয়ার একটি অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ালি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে টাকার বিনিময়ে কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর নাম উঠে এসেছে। এ নিয়ে আরেক দফা চাপে ছাত্রলীদের শীর্ষ নেতৃত্ব।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নিয়ে পুরো বিষয়টি এখন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই দেখছেন। কমিটি ভেঙে দেয়া হবে কিনা বা নতুন নেতৃত্ব আসবে কিনা, সেটিও তিনি নির্ধারণ করবেন। কারণ অনেক যাচাই-বাছাই করে দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে তিনি এই কমিটি দেখভাল করে অনুমোদন দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তার সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। এ কারণে তিনি খুবই বিরক্ত।

তারা জানিয়েছেন, বতর্মান কমিটির শীর্ষ দুই নেতা সংগঠনের শীর্ষ পদে নাও থাকতে পারেন। তবে কমিটির মেয়াদ আছে এখনও প্রায় সাত-আট মাস। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় আগাম সম্মেলনের পরিবর্তে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বে আসতে পারে। আবার শুদ্ধ হওয়ার সুযোগও পেতে পারে শোভন-রব্বানী।

সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের গণভবনে প্রবেশের পাস বাতিল করে দেয়া হয়েছে। বেশ কয়েকদফা চেষ্টা করার পরও তারা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাননি। ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার মধ্যে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। এ নিয়ে তারাও কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না। আগামী শনিবার দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ছাত্রলীগ নিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রশমিত না হলে নতুন নেতৃত্ব আসবে বলে আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা।    

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও কমিটি ভেঙে দেয়া নিয়ে  মন্তব্য করতে রাজি হননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘ বিষয়টি দলের সভাপতি দেখছেন।’

বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের সংকট নিরসন কীভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি এ নিয়ে আর কোনো কথা বলবো না। কারণ প্রধানমন্ত্রী, আমাদের সভাপতি বিষয়টি দেখছেন। আমি একটা বিষয় বুঝি না, একটা ছাত্র সংগঠন নিয়ে এত লেখা-লেখি কি দেশের অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়?’

এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারাও গণমাধ্যমে সরাসরি মন্তব্য থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।

২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯/রেজা/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়