ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শোলাকিয়ায় কড়া নিরাপত্তায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৬ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শোলাকিয়ায় কড়া নিরাপত্তায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কড়া নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত। এতে চার লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ঈদুল ফিতরের ১৯১তম জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তিু ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যবিত্ত দেশে পরিণত হওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা হয়।

ভোর থেকেই হাজার হাজার মুসল্লির পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে কিশোরগঞ্জের রাস্তাঘাট। কেউ গাড়িতে চড়ে কেউবা পায়ে হেঁটে জামাতে অংশ নিতে আসেন। সকাল ৯টার আগেই কানায় কানায় ভরে যায় শোলাকিয়া মাঠ। তবে নিরাপত্তার কড়াকড়ি ও মোবাইলফোন নিয়ে মাঠে প্রবেশে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক মুসল্লিকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। তারপরও চার লক্ষাধিক মুসল্লি এবার শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত আদায় করেন বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা।

২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার পর থেকে শোলাকিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়। এ বছর নিরাপত্তার স্বার্থে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয় বেশ কয়েকটি ক্যামেরা ড্রোন। নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে সাজানো হয় পুরো আয়োজন। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এ ছাড়াও শহরসহ মাঠের প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ আবারো তল্লাশি করা হয়। শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি আছে, সব খানে বসানো হবে নিরাপত্তা চৌকি।

এ উপলক্ষে শহরের মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয় শুভেচ্ছা তোড়ন। রাস্তার দুই পাশে টাঙানো হয় রঙ-বেরঙের পতাকা ও ব্যানার। মুসল্লিদের সুবিধায় এবারই পুরো মাঠ ও আশপাশে খাবার পানির ব্যবস্থা রাখে পৌর কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় মুখর ছিল গোটা শোলাকিয়া মাঠ।

সকালে দুটি বিশেষ ট্রেন ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে কিশোরগঞ্জে আসে।

রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে শটগানের ছয়টি ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়। জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি এবং এক মিনিট আগে একটি গুলি ছুঁড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হয়।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘এবার আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। চার থেকে পাচ লাখ মুসুল্লি এবার নামাজে অংশ নিয়েছে। মাঠে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ মাঠের বাইরে রাস্তায় ও আশপাশে নামাজে অংশ নেয়।’

জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’, যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।

সাধারণ মুসল্লিদের বিশ্বাস, বেশি লোক একসাথে নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। সে কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করতে আসেন।



রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/১৬ জুন ২০১৮/রুমন চক্রবর্ত্তী/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়