ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শ্বাসরুদ্ধ করে প্রভাষক সাইফুরকে হত্যা করে প্রেমিকা

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৭, ১ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্বাসরুদ্ধ করে প্রভাষক সাইফুরকে হত্যা করে প্রেমিকা

গ্রেপ্তার রূপা এবং মোজাম্মেল

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট : ঘুমের ওষুধ ও বিষ মিশ্রিত সেমাই খাইয়ে অজ্ঞান করার পর শ্বাসরুদ্ধ করে প্রভাষক সাইফুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে প্রেমিকা নিশাত তাসনিম রূপা প্রেমিক সাইফুরকে হত্যা করে। এরপর অপর প্রেমিক মোজাম্মেলের সহযোগিতায় লাশ দক্ষিণ সুরমার সিলেট-সুনামগঞ্জ বাইপাস এলাকার লতিপুর সড়কের পাশে ফেলে আসে। 

সোমবার সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী তৃতীয় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমানের কাছে রূপা ও মোজাম্মেলকে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. জেদান আল মুসা।

রূপা আদালতে জানিয়েছেন, শনিবার রাতে নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার হোটেল মেহেরপুরের একটি কক্ষে সাইফুরকে হত্যা করেন তিনি। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওই হোটেলের ২০৬ নং কক্ষে উঠেন তারা। কক্ষে ওঠার কিছুক্ষণ পরে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে সাইফুর কিছুটা অচেতন হয়ে পড়লে সঙ্গে থাকা রশি দিয়ে তার গলা পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন। পরে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার নাম করে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর তার অপর প্রেমিক মোজাম্মেলের সহায়তায় একটি সিএনজি অটোরিকশা করে লাশ দক্ষিণ সুরমায় নিয়ে ফেলে আসেন।

মতের বিরুদ্ধে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা, বিভিন্ন সময়ে শারীরিক সম্পর্কের সময় ধারণকৃত ভিডিও, স্থির ছবি, মিথ্যে কাবিননামা প্রকাশসহ তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি প্রদানের কারণে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে সাইফুরকে হত্যা করেন বলে জবানবন্দিতে রূপা জানিয়েছেন।

জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদের দুইজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মো. জেদান আল মুসা। তিনি আরও জানান, রোববার সকাল ১০টার দিকে দক্ষিণ সুরমার সুনামগঞ্জ বাইপাস রোডে লতিপুরে শিক্ষক সাইফুর রহমানের লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় তার মা রনিফা খাতুন বাদী হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ হত্যারহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করে।

তদন্তে রূপা এবং মোজাম্মেলের নাম উঠে আসলে পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের অবস্থান শনাক্ত করার পর নগরীর টিলাগড় এলাকা থেকে মোজাম্মেলকে (২৩) এবং দত্তগ্রাম খিদিরপুর এলাকা থেকে নিশাত তাসনিম রূপাকে (১৯) গ্রেপ্তার করে। রূপা দত্তগ্রামের মো. শফিকুর রহমানের মেয়ে। তিনি এমসি কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আর মোজাম্মেল সুনামগঞ্জের ছাতক থানার আলমপুরের নজির আলীর ছেলে। তিনি একই কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা দু’জনেই এমসি কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপের সদস্য।

নিহত সাইফুল ইসলাম এমসি কলেজের রোভার স্কাউট গ্রুপের সিনিয়র রোভার মেট ছিলেন। তিনি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফুলতৈল ছগামের ইউসুফ আলীর ছেলে। তিনি সিলেটের মদন মোহন কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের খণ্ডকালীন প্রভাষক ও গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল কলেজের প্রভাষক ছিলেন।

কলেজ শিক্ষক সাইফুর রহমানের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধনসহ সড়ক অবরোধ করেছে এমসি কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে মদনমোহন কলেজে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সিলেট-তামাবিল সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আধা ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যায়।




রাইজিংবিডি/সিলেট/০১ এপ্রিল ২০১৯/আব্দুল্লাহ আল নোমান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়