ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ফেরিঘাটে বেপরোয়া চাঁদাবাজি

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ১৭ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ফেরিঘাটে বেপরোয়া চাঁদাবাজি

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কালনা ফেরিঘাটে যানবাহনের সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের নামে বেপরোয়াভাবে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে। চাঁদাবাজদের হাত থেকে ভ্যান-রিক্সা চালকরা পযর্ন্ত রেহাই পাচ্ছে না।

কালনা ফেরিঘাট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, খুলনা, বেনাপোল, নড়াইল, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার চলাচলকারী গাড়ি থেকে নড়াইল শ্রমিক ইউনিয়নের নামে চাঁদা তোলা হচ্ছে। এ চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে চলাচলকারী বাস, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চালকেরা।

দেখা গেছে, ফেরিঘাট এলাকায় কয়েকজন লোক বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে ২০/৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। এ সময় চালকদের হাতে ‘নড়াইল জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন’ লেখা সম্বলিত ২০ টাকার একটি টোকেন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। চাঁদা না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি আটকে রেখে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ চালকদের।

গাড়ি চালকদের অভিযোগ, নড়াইল জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের নামে সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের কথা বলে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সরকারি ঘাটে প্রতিটি গাড়ি থেকে ২০/৩০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হচ্ছে।

ট্রাক চালক মাহাবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘এ পথে যাতায়াত করতে প্রতিবার সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের জন্য শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজনকে ২০/৩০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজনের কাছে চরম নাজেহাল হতে হয়।’  তিনি এই চাঁদাবাজি বন্ধ করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

চাঁদা আদায়কারী মো. তবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি দিন মজুর হিসেবে গাড়ি থেকে নড়াইল জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের টাকা কালেকশন করে দেই। তবে আমি এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে পারি না।’

নড়াইল জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সাদেক খান কালনা ফেরিঘাটে চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সিরিয়াল দিয়ে যানবাহন ফেরিতে উঠতে হয়। ফেরিতে আগে উঠা নিয়ে প্রায়ই বাস-ট্রাক শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হত। যার কারণে ঘাটে যানবাহনের সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের জন্য দশ টাকা করে নেয়া হয়।’

ঘাট মালিক মঞ্জুর সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি কালনা ঘাটের পশ্চিম পাড়ে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘যারা ওপার থেকে এপারে আসেন তারাও তার কাছে চাঁদা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু, ওপারে গিয়ে তাদের কিছু করার নাই বলে তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, গরু নিয়ে আসা লোকজন এসময় ব্যাপক চাঁদাবাজির শিকার হবেন। এটি বন্ধ হওয়া উচিৎ।

এ ব্যপারে কাশিয়ানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আজিজুর রহমান কালনা ঘাটের পশ্চিমপাড়ে নড়াইলের লোহাগাড়া অংশে (যদিও তা কাশিয়ানী উপজেলার অংশ) ব্যাপক চাঁদাবাজির হচ্ছে একথা স্বীকার করে বলেন, ওপারে আসলে আমাদের কিছুই করার নাই। ওপার আমাদের মধ্যে হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে নড়াইল জেলা পুলিশ। কাশিয়ানী অংশের চাঁদাবাজি আমরা অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছি।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মুকসুদপুর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন ভূঞা সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমি বিষয়টি ওসি সাহেবকে দিয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলবো।’

 

রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ /১৭ আগস্ট ২০১৯/ বাদল সাহা /জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়