ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শ্রুতি নাটক || আত্মহত্যা

ড. তানভীর আহমেদ সিডনী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্রুতি নাটক || আত্মহত্যা

একজন পুরুষ আর একজন নারী কথা বলছে। কাছেই কোথাও চামচের টুং টাং শব্দ শোনা যায়। তারা কথা বলতে থাকে।

নারী: আমাদের এর আগে দেখা হয়েছিল?

পুরুষ: ঠিক মনে করতে পারছি না।

নারী: আপনাকে চেনা চেনা মনে হয়, কোথায় যেন দেখা হয়েছিল।

পুরুষ: এই ছোট পৃথিবীতে অনেক জায়গায় দেখা হতে পারে।

নারী: আমারও তাই মনে হয়- সেদিন আপনার পরনে ছিল নীল পাঞ্জাবি।

পুরুষ: হুম অনেক বছর আগে এই রঙের একটি পাঞ্জাবি কিনেছিলাম। বেশ কয়েকদিন আগে তেলাপোকায় কেটেছে।

নারী: তেলাপোকার খাবার ছিল সেটি।

পুরুষ: হুম।

নারী: শুনে আনন্দ পেলাম।

পুরুষ: আনন্দ!

নারী: হ্যাঁ আমার দেখা একটি জিনিস পৃথিবী থেকে মুছে গেছে- এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে? আমার সাথে আপনার দেখা হওয়ার সময় আপনার বাড়িতে নীল পাঞ্জাবি ছিল।

পুরুষ: ঠিক তাই।

নারী: আপনাকে একটি কথা বলার ছিল।

পুরুষ: বলুন।

নারী: এখানে লোকটাকে খুন করা হয়েছিল।

পুরুষ: কখন?

নারী: একটু আগে। মরার আগে একবার সে আমার দিকে তাকিয়েছিল।

পুরুষ: অচেনা মানুষের মৃত্যু।

নারী: ও।

পুরুষ: লোকটাকে দেখতে পেলে ভালো হতো।

নারী: আয়নায় তাকালেই দেখতে পাবেন।

পুরুষ: আশ্চর্য!

নারী: একখানা লিপস্টিক নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ান। তারপর আপনার চোখের চার আঙুল নিচে লম্বা দাগ টেনে নিলেই হবে।

পুরুষ: লোকটা মরবার আগে কিছু বলেছিল?

নারী: হুম তবে সেটা আপনাকে বলা ঠিক হবে না।

পুরুষ: আহা বলুন তো।

নারী: আপনাদের মন মরে গেছে, বুক খুলে কাঁদতে ভুলে গেছেন।

পুরুষ: কথাটা মিথ্যে নয়। এই কষ্টেই কী সে মরে গেল!

নারী: কয়েকদিন আগে একটি বাস আগুনে পুড়লো।

পুরুষ: হ্যাঁ, নয়জন লাশ আর পনেরো জন অর্ধলাশ।

নারী: দেখুন কী অবলীলায় বলে ফেললেন বুক একটুও কাঁপলো না।

পুরুষ: আসলে আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে।

নারী: এ কারণেই সে নিজেকে হত্যা করলো।

পুরুষ: আহা! তাঁর সঙ্গে কথা হলে ভালো হতো। কিন্তু আপনি এতোসব জানলেন কেমন করে?

নারী: তার ডাইরি পেয়েছিলাম।

পুরুষ: ও।

নারী: অনেক শখ ছিল তার।

পুরুষ: যেমন আমাদের থাকে।

নারী: হুম লিখে গিয়েছে অনেক কথা।

পুরুষ: তিনি নিশ্চয়ই অনেক পড়তেন।

নারী: হ্যাঁ তার বইয়ের সংখ্যা দেখে তাই মনে হয়, প্রায় পাঁচ হাজার বই আছে তার।

পুরুষ: ওরে বাবা বিশাল বইয়ের দরবার!

নারী: তা বলতে পারেন, ঘরজুড়ে বই আর বই।

পুরুষ: তাহলে তার নামে করা যাবে একটি পাঠাগার, সেখানে তার ডাইরি আর প্রিয় বইগুলো-

নারী: নাহ্ ঐ হিসাব সে রেখে গেছে, আমাদের ভাবতে হবে না সেসব নিয়ে।

পুরুষ: বাহ্ বুদ্ধিমান লোক।

নারী: টনটনে হিসাব তার।

পুরুষ: তবে আর কী, যদি পাঠ করে থাকেন তার ডাইরি সেখান থেকে শোনান। জেনে নেই আছে কার ভাগে কতটুকু।

নারী: বলে গেছে সব পুড়িয়ে ফেলতে।

পুরুষ: আবার বলুন।

নারী: বলে গেছে সব পোড়াতে।

পুরুষ: বই খাতা?

নারী: কিছুই রাখতে বলেনি। শুধু বলেছে, আসছে এক অন্ধকার। সে অন্ধকারে আলো রাখা বিপজ্জনক।

পুরুষ: ওহ্ ভয়ঙ্কর লোক।

নারী: তা বলতে পারেন।

পুরুষ: এমন করে এর আগে কাউকে লিখতে দেখিনি। জ্ঞান সে পুড়িয়ে ফেলতে চায়। ছাই করতে চায়।

নারী: তা বলতে পারেন।

পুরুষ: তার বাড়ির সামনে ভাস্কর্য চাই একটা যে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।

নারী: শেষ করিনি সবটুকু- বলার আছে আরও কথা। চায়নি কোনো ভাস্কর্য হোক তার।

পুরুষ: কেন?

নারী: তাহলে বিপত্তি হবে।

পুরুষ: কেন?

নারী: তার ভয় ভাস্কর্য নিয়ে, তিনি চেয়েছেন মৃত্যুর পর সব যেন মুছে যায়।

পুরুষ: তাই কী হয়?

নারী: সে আমি জানি না। লিখেছেন- বাণিজ্য হবে তা নিয়ে, ভাগ হবে রাষ্ট্র আর মন।

পুরুষ: মিথ্যে বলেননি। তাই ব্যবসার সুযোগ দিতে চাননি। কিংবা ভাঙার নামে যে অপমান হবে তার থেকে মুক্তি চেয়েছেন।

নারী: হতে পারে।

পুরুষ: মানুষের সবচেয়ে বড়ো মূর্তি হয় অন্যের মনে।

নারী: লোকটির সাথে আপনার চেহারার মিল আছে।

পুরুষ: চেহারার মিলের সাথে মনের মিল থাকা দরকার। আমাদের সেটা আছে কিনা ভাবছি।

নারী: এমন লোকের সাথে এই সময়ে মনের মিল থাকার দরকার নেই।

পুরুষ: আমাদের সবার আত্মহত্যার সময় চলে এসেছে। আসুন সবাই আত্মহত্যা করি।

নারী: যা বলছেন ভেবে বলছেন তো?

পুরুষ: ঠিক তাই, আত্মহত্যায় মুক্তি আসবে। আসুন মুক্তির জন্য মৃত্যুবরণ করে নেই। সেখানেই সুখ মিলবে। আসুন না সকলে।

নারী: এমন করে ভাবিনি।

পুরুষ: আসুন বেঁচে থাকার দরকারে মৃত্যু টেনে নেই বুকের কাছে।

নারী: বিদায়।

পুরুষ: বিদায়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়