ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

সংগ্রামী মায়েদের গল্প

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১০, ১৪ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সংগ্রামী মায়েদের গল্প

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : আজ মা দিবস। সন্তানের কাছে বা স্বামীর কাছে একজন মায়ের খুব বেশি কিছু চাওয়ার থাকে না।

মায়ের শুধু মনে প্রাণে একটাই চাওয়া, স্বামী-সন্তানের সঙ্গে শেষ বয়সে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অনেক মায়ের এই একটি মাত্র চাওয়াটাই পূরণ হয় না। তেমনি জীবন সংগ্রামী ৩ জন মায়ের গল্প তুলে ধরে হল এ লেখায়।

তিন মেয়েকে নিয়ে রাহেনার লড়াই
জাকিয়া সুলতানা রিংকি (১১)। ধানমন্ডি গার্লস স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। রিংকির যখন স্কুল ছুটি হয়, তখন রিংকির বান্ধবীর মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য স্কুল গেইটে ভিড় করেন। কিন্তু রিংকির জন্য স্কুল গেইটে অপেক্ষা করে না কেউ। এমনকি স্কুলে অভিবাকদের মিটিংয়েও যোগ দিতে পারে না তার মা। কারণ রিংকির মা রেহেনা বেগম (৩৮) একজন কর্মজীবী নারী।

 


রাহেনা বেগম দীর্ঘ আট বছর ধরে ধানমন্ডি এলাকায় বাসা বাড়িতে বুয়ার কাজ করেন। রাহেনা বেগম জানান, ১২ বছর আগে স্বামীর হাত ধরে ফরিদপুর থেকে এসেছিলেন ঢাকায়। স্বামী জাকির ফকির মাইক্রো গাড়ি চালাতেন। তিন মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার বেশ ভালোই চলছিল। আট বছর আগে স্বামী বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। রাহেনা বেগম পড়েন অনিশ্চয়তার অকূল সাগরে। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে কাজ নেন মানুষের বাসা বাড়িতে। থাকতে শুরু করেন রাজধানীর রায়ের বাজার গদিঘর সংলগ্ন বস্তিতে। নিজের পরিশ্রমের টাকায় বিয়ে দেন বড় দুই মেয়েকে। রিংকিকে পড়াছেন ধানমন্ডি গার্লস স্কুলে।

রাহেনা বেগম জানান, তিনি বর্তমানে ধানমন্ডি এলাকায় চারটি বাসায় কাজ করেন। তার গড়ে মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা। তিনি ভোর ছয়টায় বাসা থেকে বের হন। দুপুরে বাসায় খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়েন। ফিরেন রাত নয়টায়।

মেয়েকে তেমন সময় দিতে পারেন না। মেয়ে নিজের মতো স্কুলে যায়, কোচিংয়ে যায়। মেয়েকে তেমন সময় দিতে না পারলেও, তার এ পরিশ্রম মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য বলে জানালেন রাহেনা বেগম।
 


পেটের তাগিদে চুড়ি বেচি
মালঞ্চি বেগমের বয়স প্রায় ৭০ বছর। ২০ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে চুড়ি বিক্রি করেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রুটিন করে ফুটপাতে দোকান খুলেন তিনি। এমন বয়সে যখন মালঞ্চি বেগমের নাতি পুতিদের নিয়ে আরাম আয়েশে সময় কাটানোর কথা, তখন মালঞ্চি বেগম চুড়ির পসরা সাজিয়ে বসছেন ফুটপাতে।

মালঞ্চি বেগম জানান, যে সন্তানদের তিনি মানুষের ধারে ধারে ভিক্ষা করে/কাজ করে খাইয়েছেন, সে সন্তানেরা বউ নিয়ে আজ অন্যত্র কেটে পড়েছেন। ঘরে অসুস্থ স্বামীর ওষুধ, নিজের ওষুধ ও দুবেলা খাবারের তাগিদে চুড়ি নিয়ে রাস্তায় বসেন তিনি।

মালঞ্চি বেগম স্বামী সমেত রাজধানীর একটি বস্তিতে থাকেন। তার তিন ছেলে রুবেল (৩৫), আলম (৩২) ও রবিউল (৩০) বিয়ে করে সংসারি হয়েছেন। তবে মা-বাবার খোঁজ রাখেন না।

মালঞ্চি বেগম জানান, যতদিন সামর্থ্য আছে চুড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করবেন তিনি। সামর্থ্য হারালে নিজ গ্রাম ময়মনসিংহের অষ্টধারগ্রামে ফিরে যাবেন।

সন্তান মানুষ করতেই এতো পরিশ্রম
মমতাজ বেগম (৩৫) শাহবাগে ফুল দোকান করেন ১৪ বছর ধরে। থাকেন মিরপুর ১ নম্বরে। তিনি ভোর ছয়টায় দোকান খুলেন। বাসায় ফিরেন রাত ১১টায়।

 


মমতাজ বেগমের ছয় মেয়ে এক ছেলে। কাউকে তেমন সময় দিতে পারেন না তিনি। মমতাজ বেগম জানান, বড় মেয়ে তাসনুর তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা করছেন। ২য় মেয়ে শারমিন এবার এসএসসি পাশ করেছেন। ৩য় মেয়ে নিপা ক্লাশ সিক্সে পড়ে। ৪র্থ মেয়ে মীম এবার ক্লাশ টুতে। ৫ম মেয়ে আখিঁর তিন বছর বয়স। ৬ষ্ঠ মেয়ে সৃষ্টির বয়স এক। একমাত্র ছেলে বাবলু ক্লাশ সিক্স পর্যন্ত পড়ে, এখন আলপনার কাজ শিখছে।

ছোট দুই মেয়ে মায়ের সঙ্গেই থাকে দোকানে। প্রতি ১৫ দিনে একদিন দোকান বন্ধ রেখে পুরো পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান বলে জানান মমতাজ বেগম। স্বামীর প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি এ সংগ্রামী নারী।

মমতাজ বেগম জানান, সন্তানদের সময় দিতে না পারলেও দোকান ও ইনকাম সবই তাদের জন্য। তিনি বলেন, ইনকাম না থাকলে তাদের মানুষ করবো ক্যামনে?

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মে ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়