ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সজনের ফলনে পাহাড়ি চাষিরা লাভবান

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৮, ২০ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সজনের ফলনে পাহাড়ি চাষিরা লাভবান

হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় সজনের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে সজনের দামও পাওয়া যাচ্ছে বেশ। তাই পাহাড়ি চাষিরা সজনে বিক্রিতে লাভবান হচ্ছেন।

এখন সজনের মৌসুম। এটি ফাল্গুন মাসের প্রথমেই ধরা শুরু করে। চৈত্রমাস জুড়ে বিক্রি হয়। এ সবজিটি এক সময় হবিগঞ্জের জেলার সর্বত্র চাষ হতো। এখন শুধু ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে জেলার পাহাড়ি এলাকায়। আর এ মৌসুমে সজনের ভালো ফলনও হয়েছে।

জেলার চুনারুঘাট উপজেলা দেউন্দি চা-বাগান এলাকা পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি সজনের গাছ। অনেকে গাছ থেকে সজনে সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। আবার নিজেদের খাবারে সবজির চাহিদা মেটাচ্ছেন। এভাবে জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার প্রতিটি চা-বাগান, আদিবাসী পুঞ্জির বাড়িতে সজনে চাষ হচ্ছে। এর ফলনে কোনো সার বা বিষ প্রয়োগের প্রয়োজন হচ্ছে না।

আলাপকালে দেউন্দি চা-বাগানের বাসিন্দা প্রতীক থিয়েটার সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, বাগানের উঁচু-ঢালু স্থানের মাটিতে সজনের ভালো ফলন হয়ে থাকে। এগুলোতে পুষ্টি রয়েছে।

দেউন্দি বাগানের শ্রমিক সরদার সূর্য মাল বলেন, আমাদের কয়েকটি গাছ রয়েছে। প্রতিবছর সবকটি গাছে সজনে ধরে। নিজেদের খাবারসহ বিক্রি করে ভালো টাকা পাওয়া যায়। তিনি জানান, মৌসুম শেষে গাছের কিছু কিছু ডাল কেটে দিতে হয়। এতে নতুন ডালে বেশি ফলন হয়।

বাহুবলের পুটিজুরী পাহাড়ের কালিগজিয়া পুঞ্জির বাসিন্দা শেখর দেববর্মা জানান, তাদের বাড়ি বাড়ি সজনে গাছ রয়েছে। গাছে সজনে ধরা পড়ে। এসব সজনে তারা বিক্রি করার পাশাপাশি নিজেরা খেতে থাকেন।

তিনি জানান, সজনে চাষে কোনো খরচ নেই। বরং বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।

বাহুবলের আলীয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী উটিয়ান টংপেয়ার বলেন, গাছটি ডালপালা নরম। ঝড় আসলে অনেক ভেঙে যায়। তারপরও সজনে চাষে কোনো প্রকারের ওধুষ না দিলেও ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। নিজেদের খাবারের পাশাপাশি বিক্রিও করা যাচ্ছে।

শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের পাইকারি ক্রেতা মোতাব্বির হোসেন বলেন, গ্রামে এখনও কিছু কিছু বাড়িতে সজনের চাষ হয়। তবে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে পাহাড়ে। তাই আমরা পাহাড় থেকে সজনে ক্রয় করে বাজারে খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি। এতে ভালো হচ্ছে। ক্রেতারাও বিষমুক্ত সজনে খেতে পারছেন।’

ক্রেতা কামাল মিয়া বলেন, এক আঁটি সজনে ৫০ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি। এ সবজি খেয়ে স্বাদ পাওয়া যায়। আরেক ক্রেতা রুস্তম আলী বলেন, সজনে খেতে হলে শুকনো শিমের বীজ ও শুঁটকির প্রয়োজন। সঙ্গে মাছ দিলে আরও ভালো স্বাদ পাওয়া যায়।

জানা যায়, চাষিরা বাজারে প্রতি কেজি সজনেডাটা পাইকারদের কাছে ৬০ টাকায় বিক্রি করেন। আর ১২টা সজনে এক আঁটি করে বিক্রি করেন ৩০ টাকায়। সেই সজনেডাটা খুচরা পর্যায়ে যেতে যেতে কেজি ১০০ টাকায় ও আঁটি ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক  তমিজ উদ্দিন খান বলেন, পাহাড়ে ব্যাপকভাবে সজনের চাষ হচ্ছে। সবজিটির পুষ্টিগুণও ভালো। তাই আমরা এই সবজি চাষিদের উৎসাহ দিচ্ছি।

হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালরে চিকিৎসক ডা. মিঠুন রায় বলেন, গরমের সময় অনেকে পেটের সমস্যায় ভোগেন। পেটে গ্যাস, বদহজম এবং পেটে ব্যাথা হলে সজনের তৈরি তরকারি খুব উপকারে আসবে। কারণ সজনের তরকারি হজমে সহায়তা করে। এটি পেটের সমস্যা নিরসনে সহায়তা করবে। সজনে ডাটা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়া সজনে পাতার রসও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যাদের কোলেস্টোরেলের সমস্যা আছে তাদের জন্য এটি খুব উপকারি সবজি।

এছাড়া দাঁতের মাড়ির সমস্যা দূর করতে সজনে ডাটার কোনো জুড়ি নাই। প্রাথমিক অবস্থায় টিউমারের প্রতিষেধক হিসেবে সজনে পাতা বেশ কাজের।

বাঁতের ব্যাথা ও হেঁচকি উপশমে এই সজনে ডাটা বেশ উপকারে আসে। এছাড়াও আঘাতে ফুলে যাওয়া কমাতে সহায়তা করে। নানান গুণে ভরা সজনে ডাটা আপনার রসনাতৃপ্তি মেটানোর পাশাপাশি দেবে পুষ্টি, রাখবে সুস্থ।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ জালাল উদ্দিন বলেন, জেলার পাহাড়ি এলাকায়সহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২০
হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয় ৬০ মেট্রিক টন।

শুকনো স্থানে উৎপাদন ভালো হয়। বর্তমানে পাহাড়ি এলাকায় চাষে কৃষকরা লাভবান। পাহাড়ি এলাকার বাড়ি বাড়ি সজনের চাষ হচ্ছে। এর চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। হবিগঞ্জ থেকে কিছু পরিমাণ সজনে রাজধানী ঢাকায়ও যাচ্ছে।



হবিগঞ্জ/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়