ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

সঠিক ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৪, ২৫ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সঠিক ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে

রাজধানীর চানখাঁরপুলে ‘শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ উদ্বোধন হয়েছে। ১৮ তলা বিশিষ্ট ও ৫০০ শয্যার এই ইনস্টিটিউট উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে থাকছে ৫০টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) এবং ১২টি অপারেশন থিয়েটার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন চাঁনখারপুলে দুই একর জমির ওপর ৯১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ইনস্টিটিউট বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। দেশে এ ইনস্টিটিউট উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নবযুগের সূচনা হয়েছে।

মূলতঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এ ইনস্টিটিউট। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকালে বিরোধী দল সহিংস পথ বেছে নেয়। বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে একের পর এক পেট্রলবোমা হামলা হয়। এতে হতাহত হয় শত শত মানুষ। আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা যাচ্ছিল না সীমাবদ্ধতার কারণে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে, মেঝেতে, সিঁড়ির পাশে এমনকি বাথরুমেও আগুনে পোড়া রোগীর ভিড়ে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহত নারী-পুরুষ-শিশুদের দেখতে গিয়ে ব্যথিত হয়ে ওঠেন। তিনি অগ্নিদগ্ধ মানুষের চিকিৎসায় বড় ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। তার সে ঘোষণার সফল বাস্তবায়ন শেষে ২৪ অক্টোবর উদ্বোধন হয়েছে এই ইনস্টিটিউট।

এ ইনস্টিটিউটে শুধু হাজার হাজার অগ্নিদগ্ধ রোগীর সুচিকিৎসাই হবে না, একইসঙ্গে এটি চিকিৎসক ও নার্সদের এ বিষয়ে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরির ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে। নতুন এই ইনস্টিটিউট পুরোপুরি চালু হলে প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১২ জন চিকিৎসক এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন। অত্যাধুনিক এই ইনস্টিটিউট থেকে দগ্ধ রোগীরা বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা পাবেন। একই সঙ্গে তৈরি হবে প্লাস্টিক সার্জন, যাদের দিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে পৃথক বার্ন ইউনিট স্থাপন করা হবে। এতে দগ্ধ রোগীরা হাতের কাছেই পাবেন সুচিকিৎসা।

বাংলাদেশে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ সারাদেশে মোট ১৪টি হাসপাতালে বার্ন ইউনিট রয়েছে। তবে ঢাকার বাইরেরগুলো নামমাত্র। পূর্ণাঙ্গ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির ব্যবস্থা রয়েছে শুধু ঢাকায়। এ কারণে সারাদেশ থেকে পোড়া রোগীরা ঢাকায় আসেন। আর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট প্রয়োজনের তুলনায় এটি একেবারেই ছোট ও অপরিসর। মারাত্মক দগ্ধ রোগীর আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও ছিল না। আবার পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে দগ্ধ রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা প্রদান ব্যাহত হচ্ছিল।

নবনির্মিত শেখ হাসিনা বার্ন  অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০০টি কেবিন, ২০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ৬০টি হাইডিপেন্ডেন্সি বেড, সর্বাধুনিক ১২টি অপারেশন থিয়েটার এবং অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড রয়েছে। এই ইনস্টিটিউটে হেলিপ্যাড সুবিধাও রয়েছে। শুধু অগ্নিদগ্ধ নয়, জন্মগত ঠোঁটকাটা-তালুকাটা, আঙুল জোড়া লাগানো, পায়ের ত্রুটি, ক্যান্সার, দুর্ঘটনা, ট্রমা, হাত-পা সার্জারি রোগীরা এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সেবা নিতে পারবেন।

ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, সুদীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ দিনটির জন্য স্বপ্ন দেখেছি। অপেক্ষার প্রহর গুনেছি, স্বপ্ন বাস্তবায়ন দেখার জন্য। আজ সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেখে আমি ভীষণ আনন্দিত। স্বপ্নের বার্ন ইনস্টিটিউটে কোনো রোগী যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায় সেদিকে প্লাস্টিক সার্জনসহ সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।

আমাদেরও প্রত্যাশা অগ্নিদগ্ধ মানুষ যেন এখানে সঠিক ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মনে করি অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে এ বার্ন ইনস্টিটিউট অবদান রাখবে। অগ্নিদগ্ধ রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছে এটি আশার আলো হিসেবে প্রতিভাত হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ অক্টোবর ২০১৮/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়