ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সত্যেন্দ্র নাথ রায় ছিলেন শিক্ষানুরাগী জমিদার

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সত্যেন্দ্র নাথ রায় ছিলেন শিক্ষানুরাগী জমিদার

জমিদার সত‌্যেন্দ্র নাথ রায়ের পূর্বপুরুষরা এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন

কুষ্টিয়া অঞ্চলের প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন সত্যেন্দ্র নাথ রায়। এই অঞ্চলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন এই শিক্ষানুরাগী জমিদার।

সত্যেন্দ্র নাথ রায়ের পূর্বপুরুষদের বসবাস ও জমিদারি ছিল বর্তমান কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামে। তার বাবা ছিলেন জমিদার নলিনাক্ষ রায়।

১৯০৫ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সত্যেন্দ্র নাথ রায়। বাবার মৃত্যুর পর জমিদারির দায়িত্ব নেন তিনি। জমিদারি দেখাশোনার পাশাপাশি তিনি রাজশাহী সিটি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন।

শিক্ষানুরাগী এই জমিদার গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য চিথলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, এম ই মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং চিথলিয়া দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অসহায় মানুষদের সাহায্য করতেন।

জমিদার সত্যেন্দ্র নাথ রায়ের জমিদারি সম্পত্তি ঠিক কতটা ছিল তা সঠিক জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে, মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া এলাকাসহ তিন-চারটি মৌজা তার জমিদারির অধীনে ছিল। জমিদার সত্যেন্দ্র নাথ রায়ের মস্ত বড় বাড়ি ছিল। তিনি ছিলেন চার ছেলের বাবা।

১৯৪৭ সালে যখন বাংলা প্রদেশ দুই অংশে বিভক্ত হয় এবং জমিদারি প্রথার অবসন ঘটে, তখন জমিদার সত্যেন্দ্র নাথ রায়ের সম্পত্তি নিলামে তোলে সরকার। নিলামে ওঠা জমি কেনেন বাদশা মোল্লা। বাকি যে জমি ছিল তার কিছু অংশ বিক্রি করে দিয়ে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কল্যাণীতে চলে যান। অন‌্য জমিগুলো দখল করে স্থানীয় মুসলীম পরিবারগুলো।

পাকিস্তান আমলে সত্যেন্দ্র নাথ রায় কয়েকবার নিজের বসতভিটা দেখতে আসেন। সর্বশেষ তার ছেলে ১৯৭২ সালে কলকাতা থেকে পূর্বপুরুষের ভিটা দেখতে আসেন বলে জানান সেখানকার বাসিন্দা আক্কাস আলী।

জমিদার সত্যেন্দ্র নাথ রায়ের জমিদারবাড়ি ও জমিদারি এখন আর নেই। শুধু পড়ে রয়েছে জমিদারবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। জমিদার সত্যেন্দ্র নাথ রায় না থাকলেও এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সংস্কার করা ৪০০ বছরের পুরাতন কালী মন্দির। আনুমানিক ১১১৫ বঙ্গাব্দে সত্যেন্দ্রনাথ রায়ের পূর্বপুরুষরা প্রতিষ্ঠা করেন মন্দিরটি। ৩০ এর দশকের শুরুর দিকে জমিদার সত্যেন্দ্র নাথ রায় এ মন্দির সংস্কার করেন। তার বাড়ির পাশেই এ মন্দিরটি অবস্থিত।

এ পুরাতন মন্দির সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় নিমাই ঠাকুর জানান, এ মন্দিরটি অনেক পুরাতন। আমি আমার দাদার কাছ থেকে শুনেছি, তিনি নাকি এই মন্দিরটি এমনই দেখেছেন। জমিদার সত্যেন্দ্র নাথ রায়ের জমি যখন কেনে বাদশা মোল্লা, তখন তিনি অঙ্গিকার করেন যে, মন্দিরের যে জমি রয়েছে তা মন্দিরের নামেই থাকবে। তারপর মন্দিরের সকল সম্পত্তি স্থানীয় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারগুলো ভাগ করে নেয়। অসহায় হয়ে পড়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়। এরপর ২০১২ সালে তারা একটি মামলার মাধ্যমে এই মন্দিরের ওপর অধিকার ফিরে পায়। আবার মন্দিরে পূজা-অর্চনা চালু হয়। গুরুত্বপূর্ণ পূজা-পার্বণ হয় এই মন্দিরে।

মন্দিরের বর্তমান সম্পত্তি ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, জমিজমা বলতে আর তেমন কিছুই নেই। মন্দিরের নামে শুধু এক বিঘা জমি আছে। তবে আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে, এ মন্দিরটি এখনো জাগ্রত। তাই আমরা এখানে পূজা করি। আমরা এখনো আপ্রাণ চেষ্টা করছি মন্দিরটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। মন্দিরটি আমাদের অনেক পুরাতন ইতিহাস বহন করে। তাই আমাদের প্রার্থনা শত শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য বহনকারী মন্দিরটি যেন সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

 

কুষ্টিয়া/কাঞ্চন কুমার/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়