ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সমুদ্রে বিলীন হচ্ছে ঝাউ বাগান, সৌন্দর্য হারাচ্ছে সৈকত

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ৭ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সমুদ্রে বিলীন হচ্ছে ঝাউ বাগান, সৌন্দর্য হারাচ্ছে সৈকত

সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার: সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে সৌন্দর্য বর্ধনকারী সবুজ বেষ্টনী ঝাউবাগান হুমকির মুখে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙছে বালিয়াড়ি ও সড়ক। সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে সৈকতের ঝাউবাগান। গত ১০ বছরে বিলীন হয়েছে লক্ষাধিক ঝাউগাছ।

দ্রুত সময়ের মধ্যে শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সৈকতের বালিয়াড়িতে শেকড়যুক্ত গাছ রোপণের দাবি পরিবেশবাদীদের। তবে পর্যটনবান্ধব শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে ঝাউবাগান গড়ে তোলা হয়। এ সময় বালিয়াড়ির প্রায় ৫শ’ হেক্টর জায়গায় লাগানো হয় সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি ঝাউগাছ। পরে বাগানের আয়তন আরো বাড়ে। এই সবুজ বেষ্টনী, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে কক্সবাজার শহর রক্ষা করে।

তবে, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় এবং ঢেউয়ের ধাক্কায় গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে সৈকতের বালিয়াড়িতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ঝাউ বাগানের। গত ১০ বছরে ঝাউ বাগানের এক লাখেরও বেশি গাছ সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ঝাউ বাগানের ক্ষতি হয়েছে।

রোববার দুপুরে সৈকতের ডায়াবেটিকস, মাদ্রাসা ও শৈবাল পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে বালিয়াড়ি। উপড়ে পড়ছে সৈকতের ঝাউগাছ ও ভেঙে তছনছ হচ্ছে সৈকত সড়ক। গত পাঁচ দিনে বিলীন হয়েছে সৈকতের তিন শতাধিক ঝাউ গাছ এবং লণ্ডভণ্ড হয়েছে ডায়াবেটিকস পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত দু’ কিলোমিটার রাস্তা। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় আতঙ্কে স্থানীয়সহ সৈকতের ব্যবসায়ীরা।

সৈকতের মাদ্রাসা পয়েন্টে বনবিভাগের দায়িত্বে থাকা পুতু মিয়া বলেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে ঢেউ এসে ঝাউ বাগানে আচড়ে পড়ায় ঝাউ গাছ উপড়ে পড়ছে; সৈকতের রাস্তাঘাট তছনছ হয়ে যাচ্ছে। গত বছর এই বর্ষা মৌসুমে প্রায় তিন হাজার গাছ বিলীন হয়েছে। এ বছর বর্ষা মৌসুমে গত পাঁচ দিনে তিন শতাধিক ঝাউ গাছ উপড়ে গেছে।

সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে রেস্তোরাঁর কর্মচারী আয়ুব বলেন, সাগরের ঢেউ যেভাবে আঘাত করছে, তাতে মনে হচ্ছে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাদের রেস্তোরাঁও ভেঙে যাবে। ইতিমধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা তছনছ হয়েছে। বাকি যা আছে, তাও হচ্ছে।

সৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্টের স্থানীয় বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস থেকে এই ঝাউ বাগান তাদের রক্ষা করে। কিন্তু যেভাবে ঝাউ গাছ সাগরের ঢেউয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, তাতে তাদের শঙ্কা বাড়ছে। এই ঝাউ বাগান রক্ষার্থে বনবিভাগ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।  

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকারী এই সবুজ বেষ্টনী রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি সৈকতের বালিয়াড়িতে শেকড়যুক্ত গাছ রোপণের দাবি জানালেন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দিপু জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কক্সবাজারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের পাড় ঘেঁষে যে ঝাউবাগান রয়েছে, ইতিমধ্যে সেটির এক লাখের বেশি ঝাউ গাছ বিলীন হয়েছে। সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের ডায়াবেটিকস পয়েন্টের সড়ক বিলীন হচ্ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সৈকতের বালিয়াড়িতে শেকড়যুক্ত গাছ রোপণ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

তবে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাই সৈকতের কলাতলী থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনরোধে সুনির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পর্যটন করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে দ্রুত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙনরোধ ও পর্যটনবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

 




রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/৭ জুলাই ২০১৯/সুজাউদ্দিন রুবেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়