ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

শুভ নববর্ষ

সমৃদ্ধি ও সাফল্য আসুক প্রতিটি ক্ষেত্রে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৫, ১৪ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সমৃদ্ধি ও সাফল্য আসুক প্রতিটি ক্ষেত্রে

ওই নূতনের কেতন উড়িয়ে আবার এল বৈশাখ। শুরু হলো বাংলা নববর্ষ ১৪২৬। বাংলা সনের প্রথম দিন। প্রকৃতিতে বৈশাখের এক অন্যরকম ছোঁয়া। জীর্ণ পুরাতন ভেসে যায়। আসে নতুনের আবাহন। সুরে সুরে ধ্বনিত হয়, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা... অগ্নিস্নানে শূচি হোক ধরা...’। চিরায়ত বাঙালির জীবনে এক প্রাণস্পর্শী দিনের শুরু হয়েছে আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। আজকের নতুন প্রভাতে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে দেশজুড়ে বাঙালির ঘরে ঘরে জেগেছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। নতুন আশা ও উদ্দীপনার বছর। আনন্দঘন পরিবেশে আজ নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নানা আয়োজনে মেতে উঠেছে সবাই।

পয়লা বৈশাখে শুরু বাঙালির নববর্ষ। আবহমান কাল ধরে এই নববর্ষ বাঙালির জীবন-সংস্কৃতির অঙ্গ। বাঙালির সবচেয়ে বড় অসম্প্রদায়িক ও সার্বজনীন লোক উৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ এক অভিন্ন হৃদয়াবেগে মিলিত হয় এ উপলক্ষে। অতীতের ভুল-ত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় নববর্ষ। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, জেলে-তাঁতী, কামার-কুমারসহ নানা পেশার মানুষ যুগ যুগ ধরে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে আসছে আনন্দ-উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে। ব্যবসায়ীরা এখনও হিসাবের নতুন খাতা (হালখাতা) খোলেন বৈশাখের প্রথম দিনে।

বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় মূলত মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকে। সে সময় বাংলার কৃষকরা চৈত্রমাসের শেষদিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূ-স্বামীর খাজনা পরিশোধ করত। পরদিন নববর্ষে ভূস্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষে তখন মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। এর ধারাবাহিকতায় নববর্ষে হালখাতার প্রচলন হয়। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের শুরুতে তাঁদের পুরনো হিসাব সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এ উপলক্ষে তাঁরা নতুন-পুরাতন ক্রেতাকে আমন্ত্রণ করে মিষ্টি বিতরণ এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করেন।

নববর্ষ উপলক্ষে দেশে গ্রামেগঞ্জে নদীর পাড়ে, খোলা মাঠে কিংবা বটগাছের ছায়ায় মেলার আয়োজন করা হয়। দোকানিরা মুড়ি, মুড়কি, পুতুল, খেলনা, মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, বাঁশিসহ বাঁশ, বেত ও মাটির তৈরি বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসেন। মেলার আয়োজন হয় শহরেও। রঙ-বেরংয়ের মুখোশ পরে নানা সাজে সজ্জিত হয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় সবাই। একই আনন্দে প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে একাকার হয় দেশের সব মানুষ। আমাদের কৃষকরা আজও বীজ বোনেন, চারা রোপণ করেন, ফসল কাটেন বাংলা পঞ্জিকা ধরে। কেবল বাঙালির নয়, পহেলা বৈশাখ আমাদের আদিবাসী জনগোষ্ঠীরও উৎসবের দিন। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এ সময়েই মেতে ওঠেন বৈসাবি বা বিজু উৎসবে। চৈত্র সংক্রান্তির মেলা, পয়লা বৈশাখের মেলা, বারুণীর মেলা, চড়কের মেলা বসে বর্ষবরণ ঘিরে।

নববর্ষ মানে নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন, নতুন সংকল্প। সামনের দিনগুলোকে বিনির্মাণের তাগিদ। আমাদের উদ্যম, আমাদের অধ্যবসায় সব নিয়োজিত হোক জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে। নববর্ষে আমাদের প্রত্যাশা, বিদায়ী বছরের সব আবর্জনা দূর হয়ে যাক। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি ও সাফল্য আসুক। জননিরাপত্তা, স্বস্তি-শান্তি নিশ্চিত হোক। নতুন বছর দেশবাসীর জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনবে, এটিই প্রত্যাশা। সবার জন্য মঙ্গলময় হয়ে উঠুক নতুন বছর। রাইজিংবিডির অগণিত পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা। স্বাগত ১৪২৬।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ এপ্রিল ২০১৯/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়