ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সরকারের ধান ক্রয়ে গতি কম থাকায় চিন্তিত কৃষক

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সরকারের ধান ক্রয়ে গতি কম থাকায় চিন্তিত কৃষক

হাওর অঞ্চলসহ সারা দেশে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। সরকার ধান-চাল মিলে এবার সাড়ে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান কেনা শুরু হলেও ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ৩০ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে। ধান ক্রয়ের এই ধীর গতির কারণে চিন্তিত কৃষক।

নগদ টাকার সংকট থাকায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে ধান বিক্রি করছেন কৃষক। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, কৃষকেরা ভালোভাবে ধান ঘরে তুলতে পেরেছে। তারা এখন ধানের ভালো দামও পাচ্ছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান ক্রয় শুরু হয়। এ পর্যন্ত মাত্র ৩০ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে। আর চাল কেনা হয়েছে ৪০ হাজার টন।  কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সরকার চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল কেনা হবে। এখন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আরও ২ লাখ মেট্রিক টন বেড়ে যাওয়ায় মোট ১০ লাখ টন ধান কিনবে সরকার। ধান-চাল মিলে এবার সরকারিভাবে সাড়ে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা ও ঈদের কারণে সরকারিভাবে ধীর গতিতে ধান কেনা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কেনা হবে। কৃষকের হাতে নগদ টাকা না থাকায়  সরকারি মূল্য ১০৪০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছে। আর এ ধান কিনছেন ফঁড়িয়া ও স্থানীয় মিলমালিকরা। এতে সাধারণ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চলতি বোরো মৌসুমে যেসব কৃষক বোরো চাষ করেছেন এমন প্রকৃত কৃষকের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। লটারি করার পর চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত কৃষকের নামের তালিকা ইউনিয়ন অফিসের তথ্যকেন্দ্রে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে সবাই দেখতে পায়। সরকারি ধান ও চাল কেনার কাজ অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে করার নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। কোনো ফঁড়িয়াদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে না। কোনো কর্মকর্তা কৃষককে বাদ দিয়ে ফঁড়িয়া বা মধ‌্যসত্বভোগীদের কাছ ধান কিনলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সুনামগঞ্জের নামগঞ্জের কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘টাকা ধার করে বোরো ধান চাষ করেছি। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ধীর গতিতে ধান, চাল কিনছেন। বীজ-সার কেনার জন্য ধার শোধ করার জন্য প্রতিমণ ধান ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা করে বিক্রি করতে বাধ‌্য হয়েছি।’

হবিগঞ্জের জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম বলেন, ‘প্রকৃত কৃষকের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে ধান কেনা হচ্ছে। তালিকার সিরিয়াল অনুযায়ী ধান, চাল কনো হচ্ছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান ও ৭ মে থেকে বোরো চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে, যা আগামী ৩১ অগাস্ট শেষ হবে। এ সময়ের মধ্যে ধান-চাল কেনা কার্যক্রম শেষ হবে।’

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কৃষকেরা সফলভাবে ধান ঘরে তোলার পাশাপাশি বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন। সারা দেশে এ বছর ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে হাওরের শতভাগ এবং সারা দেশের ৯০ শতাংশের বেশি ধান কাটা শেষ হয়েছে। অঞ্চলভেদে ধানের বাজার দর কম বেশি রয়েছে। তাছাড়া, ভেজা ও শুকনা ধান এবং মোটা-চিকন ধানের দামের পার্থক্য তো থাকেই।’

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘বোরো ধান প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে ধীরগতি হলেও আশা করি, নির্দিষ্টি সময়ের কেনা সম্পন্ন হবে। সরকারি গুদামে জায়গা খালি থাকা সাপেক্ষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রয়োজনে আরও বেশি ধান ও চাল কেনা হবে। তালিকাভুক্ত কৃষকের টেনশনের কিছুই নেই।’

 

ঢাকা/আসাদ/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়