ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সহযোগিতা ও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৭, ২২ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সহযোগিতা ও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে সেদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  রাষ্ট্রীয় সফরের মধ্য দিয়ে।  প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকালে দুদেশের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বাংলাদেশের নৌপথ ভুটানকে ব্যবহার করতে দেয়া এবং কৃষি, সংস্কৃতি, পণ্যের মান ইত্যাদি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া থিম্পুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। এক কথায় তার এই সফরকে ফলপ্রসূ বলা যায়।

প্রধানমন্ত্রী থিম্পুতে মূলত অটিজমবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে গেলেও দুদদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সংহত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়েছে তার এই সফরে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের শেষ দিনে ২৬ দফার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই অঞ্চল ও বিশ্বের বৃহত্তর শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য দুদেশ একত্রে কাজ করবে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের নেতৃবৃন্দ পরবর্তী সময়ে কোনো উপলক্ষে একত্রিত হলে সেখানে ত্রিদেশীয় সহযোগিতায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সমঝোতা স্মারক সই করবে।

বস্তুত বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ভুটান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশটি ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমানে সার্কের কার্যকারিতা প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ায় এখন দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই ভুটানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার হলে দুই দেশই উপকৃত হবে। শেখ হাসিনার সফরকালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ আমদানি, জলজ সম্পদের ব্যবহার, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনাসহ অনেক বিষয় উঠে আসে।

জলবিদ্যুৎ গ্রিন এনার্জি হওয়ায় বিশ্বে এর চাহিদা বেশি। ভুটানের খরস্রোতা পার্বত্য নদীগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। সহজে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশ ভুটানের অংশীদার হলে দুই দেশই লাভবান হবে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক পণ্য রয়েছে, যা আমদানি-রফতানির মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতির প্রসার ঘটতে পারে।

ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে সে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের বাংলাদেশ সফরকালে ঢাকায় ভুটান দূতাবাসের জন্য প্লট বরাদ্দ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সে সময় দুদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ ও বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয় গুরুত্ব পায়। এতে দুদেশের সম্পর্ক জোরদারের পটভূমি তৈরি হয়। আর এবার ভুটানে শেখ হাসিনার সফরের মধ্য দিয়ে সেই প্রচেষ্টা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল।

আমরা বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সহযোগিতা ও সম্ভাবনার নতুন যুগকে স্বাগত জানাই। ভুটানের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো বৃদ্ধি পাবে এই প্রত্যাশা আমাদের। আমরা আশা করি, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে নবযাত্রা সূচিত হয়েছে, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো জোরদার হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ এপ্রিল ২০১৭/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়