ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সহযোগী সংগঠনে ‘ব্লেম গেমের’ রাজনীতি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ২৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সহযোগী সংগঠনে ‘ব্লেম গেমের’ রাজনীতি

আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পদপ্রত্যাশীরা যেন কোনো ধরনের ‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা’ না করে, সেই বিষয়ে দলীয় হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না নেতৃত্বের প্রতিযোগীরা।

সম্মেলনের আগে তো বটেই, সম্মেলনের পরও দলীয় হাইকমান্ডের বেছে নেয়া নতুন নেতৃত্বকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মিথ্যা অভিযোগে ঘায়েল করার অপেচেষ্টায় মেতেছে একটি চক্র।  এর অংশ হিসেবে একে অন্যের বিরুদ্ধে ‘ব্লেম গেমে’ নেমেছে পদবঞ্চিতদের কেউ কেউ।

বিষয়টিকে বিরাজনীতিকরণের চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা জানিয়েছেন, অপরাজনীতির এই বিষয়টি তাদের জন্য বিব্রতকর।  এখনি এগুলোর লাগাম টেনে ধরতে হবে।  যারা এগুলো করছে, সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে দল।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যখন দল নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবে, তখন সেই নেতৃত্বকে সম্মান জানিয়েই রাজনীতি করতে হবে। ওই নেতৃত্বের ভাবমূর্তি রক্ষা করা সকলের কর্তব্য।  এটাই সঠিক রাজনীতি। মিথ্যা অভিযোগ তুলে কারো বিরুদ্ধে অপরাজনীতি করলে সে রাজনীতিতে টেকে না। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিযোগিতা যেন প্রতিহিংসায় রূপ না নেয়।’

দলীয় সূত্র বলছে, এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের চারটি সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং সর্বশেষ যুবলীগের সম্মেলন হয়েছে। সেখানে অনেক যাচাই-বাছাই করে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টও দেখা হয়েছে। অর্থাৎ সার্বিক দিক দিয়ে বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে।

গত ৬ নভেম্বর কৃষক লীগের সম্মেলনের আগে থেকেই ‘ব্লেম গেমের’ সূচনা।  এরপর শ্রমিক লীগ, স্বেচ্চাসেবক লীগ, যুবলীগের সম্মেলন হলেও চক্র থেমে নেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে। নেতৃত্ব ঘোষণার পরও তারা দায়িত্বপ্রাপ্তদের চরিত্র হরণে  কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের টেনে আনছেন এসব ক্ষেত্রে। এ কাজে তারা ব্যবহার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমকে। গণমাধ্যমে  অনেক সময় ভুল তথ্য দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে।  কখনো বলা হচ্ছে নির্বাচিতদের কেউ কেউ টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত ছিল। কখনো বলা হচ্ছে বিতর্কিত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।  আবার রাজনীতিতে সম্প্রতি বিতর্কিত হয়েছেন, এমন কারো সঙ্গে আগে তোলা ছবি সামনে এনে বলা হচ্ছে তার কাছের মানুষ।  তবে এসবের কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ দিতে পারছে না এই চক্রটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ছবি ছড়িয়ে দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে নব-নির্বাচিত কেউ কেউ বিতর্কিত।

গত কয়েকদিনে এই প্রতিবেদকের কাছে বেশ কয়েকটি মেইল এসেছে, যেখানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নতুন নির্বাচিত কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এসব মেইলের উৎস সম্পর্কে জানা যায়নি।  তবে মেইলে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেয়া হয়েছে, খোঁজ নিয়ে সেগুলোর কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অসুস্থ প্রতিযোগিতা এই বিষয়টিকে তারা খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন।  এজন্য এগুলো কঠোর হাতে দমনের কথা ভাবছেন তারা।  কারণ  এই চর্চা অব্যাহত থাকলে তা দলের জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে।  অভিযোগগুলো কোন উৎস থেকে  আসছে? কারা করছে? এসব ব্লেম গেমের সঙ্গে কারা জড়িত?-সেসব খুঁজে বের করা হবে। প্রয়োজনে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।  প্রমাণ পেলে ব্লেম গেম যারা খেলছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তারা বলছেন, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে সেটা স্বাভাবিক।  কালে কালে সেটা হয়ে এসেছে। কিন্তু অসুস্থ প্রতিযোগিতা মেনে নেয়া হবে না। রাজনীতি করতে গেলে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একে অন্যের সঙ্গে ছবি তোলা হয়। স্মার্ট ফোনের যুগে সেটা আরো বেশি। সেসব ছবি পরবর্তীতে সামনে এনে একজনকে বিতর্কিত করা অপরাধ।  কারণ এক সময় ভালো একজন রাজনীতিক পরে বিতর্কিত হয়ে গেলে তার সঙ্গে অতীতে কেউ ছবি তুললে সেও বিতর্কিত হয়ে যায় না। আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতার সঙ্গেও অনেকের ছবি আছে।  কাল সেই নেতা বিতর্কিত হয়ে গেল যারা ছবি তুলেছেন তারাও কি বিতর্কিত হবেন? অবশ্যই হবেন না।

পদ পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘এগুলো চরিত্র হননের অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।  সর্বোচ্চ যাচাই-বাছাই করে সহযোগী সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে। এগুলো আসলে রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণকে শক্তিশালী করার চেষ্টা। এজন্য গণমাধ্যমকে আরো বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা দলের যে ইতিবাচক রাজনীতির সূচনা করছেন- তা কিছু দুষ্টু  লোকের জন্য থেমে থাকবে না।  প্রয়োজনে দল এসব ক্ষেত্রে আরো কঠোর হবে।  সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাদা ছোঁড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। আমাদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা হবে সুস্থ। আমি নেত্রীর পক্ষ থেকে পরিস্কারভাবে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই, অসুস্থ প্রতিযোযিতা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। ’

 

ঢাকা/পারভেজ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়