ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সাইফ হাসানের ‘৩৩৩’

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ৩১ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাইফ হাসানের ‘৩৩৩’

৩৩৩! সংখ্যাটি চোখে পড়লেই ভেসে উঠে ক্রিস গেইলের ছবি। ইউনিভার্স বস ক্রিস গেইলের জার্সি নম্বর ওই সংখ্যাতেই। নিজের টেস্ট সেরা ইনিংসকে স্মরণীয় করে রাখতেই গেইলের ওই ‘প্রচারণা’।

আজ মিরপুর মাঠে দেখা মিলল ৩৩৩-র! নাহ, কোনো ক্রিকেটার ৩৩৩ রানের ইনিংস উপহার দেননি। সাইফ হাসান ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোনের জার্সিতে খেলেছেন ৩৩৩ মিনিটের দৃঢ়চেতা ইনিংস। পৌনে ছয় ঘন্টা উইকেটে থেকে ডানহাতি ওপেনার করেছেন ৫৮ রান। কিন্তু লম্বা সময় উইকেটে থেকে যে অবিশ্বাস্য দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তা এক কথায় অল্পনীয়।

সাদা পোশাকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের তেড়েফুঁড়ে মারার প্রবণতা বেশ প্রবল। উইকেটে গিয়ে আগ্রাসন দেখান অনেকে। কেউ কেউ আবার উইকেটে থিতু হয়ে কঠিন সময় পাড় করে উইকেট বিলিয়ে আসেন। অনেকেই মনে করেন,‘বাংলাদেশ টেস্ট খেলে ওয়ানডে স্ট্যাইলে।’ সেই ভাবনা বিভিন্ন সময়ে পাল্টে দিতে চেয়েছেন অনেকে। কেউ চেষ্টা করেছেন কিন্তু লম্বা সময় ধরে টিকে থাকতে পারেননি। আবার কেউ আশা দেখিয়েছেন কিন্তু ফল দিতে পারেননি।

আশা-নিরাশার দোলাচালে সাইফ হাসান দৃষ্টান্ত। জাতীয় দলে অভিষেক হয়নি। টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে মনসংযোগ, একাগ্রতা ও দৃঢ়সংকল্প সাইফকে পরিচিত করেছে সবার কাছে।

বয়সভিত্তিক দল থেকেই সাইফকে বিবেচনা করা হতো ভবিষ্যত টেস্ট ব্যাটসম্যান। সেই দৌড়ে সাইফের থেকে ভালো অবস্থানে এখন আর কেউ নেই। মিরপুরে সাইফ যেন সেই ভাবনার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।

পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ১৯১ বলে, ৩০২ মিনিটে। কালেভাদ্রে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের থেকে এমন ধৈর্য্যশীল ইনিংস এসেছে। অথচ সাইফ এমন লম্বা ইনিংস খেলেছেন আগেও। ২০১৪-১৫ মৌসুমে সাইফ বগুড়াতে পঞ্চাশ করেছিলেন ৩১৭ মিনিটে।

বয়স এখনও ২১ পেরোয়নি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার ডাবল সেঞ্চুরি আছে দুটি। ক্যারিয়ার সেরা ২২০ রানের ইনিংসটি খেলেছেন ৩২৯ বলে ৪৮৮ মিনিটে। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ২০৪ রানের ইনিংসটি ছিল ৪১০ বলের, ৫৫৬ মিনিটের। লম্বা ইনিংস খেলার আরও রেকর্ড রয়েছে ডানহাতি ওপেনারের। সেই চেষ্টায় নিত্যদিন অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছেন।

আজ শুরুতে খানিকটা সংগ্রাম করেছেন সাইফ। থিতু হওয়ার পর করেছেন সহজাত ব্যাটিং। প্রথম বলে খুলেছিলেন রানের খাতা। পরের রান নিতে খেলেন ২০ বল। প্রথম বাউন্ডারির জন্য অপেক্ষা করেছেন ৮২ বল পর্যন্ত। এভাবেই ধীর ল-য়ে এগিয়েছে তার ইনিংস। মাটি আঁকড়ে পড়ে থেকে সাজিয়েছেন ইনিংস। একপ্রান্ত ধরে রেখে এগিয়ে নিয়েছেন দলের রানের চাকা।

সাজানো গোছানো ইনিংসে খেলেছেন দৃষ্টিনন্দন একাধিক শট। তাইজুলকে লং অফ ও মিড উইকেট দিয়ে ছক্কায় ‍উড়াতে কার্পণ্য করেননি। রুবেলকে পরপর দুই বলে ফরোয়ার্ড ড্রাইভে ও স্কয়ার কাটেও পাঠিয়েছেন বাউন্ডারিতে। গতিময় বোলার হাসান মাহমুদকে প্রায় দর্শক বানিয়ে রেখেছিলেন সাইফ।

সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে সাইফ ছিলেন মনোযোগী। আলগা শট খেলেননি। প্রতিপক্ষকে সুযোগ দেননি। ৩৩৩ মিনিট ক্রিজে থেকে একবারও তার আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেনি।

অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল খুব বেশি খেলার চেষ্টা করেননি। ডাউন দ্য লেগের বলগুলোতে পেছনের পায়ে ভর করে খেলেছেন। শর্ট বল ডাক করেছেন ভালোভাবে। আর লেন্থ বল শাসন করার চেষ্টা করেছেন।

সাদা পোশাকে দৃঢ় ব্যাটিংয়ে হাত পাকিয়েছেন সাইফ। ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখিয়েছেন নিজের কারিশমা। এবার জাতীয় দলে দ্যুতি ছড়ানোর পালা। ভারত সিরিজে তার অভিষেক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ইনজুরির কারণে হয়নি। শোনা যাচ্ছে পাকিস্তান সফরের দলে থাকবেন ডানহাতি ওপেনার।

উইকেটে পড়ে থাকার মানসিকতা, লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করার গুন, অসাধারণ টেম্পারমেন্ট ও মনের জানালা খুলে ব্যাটিং করার মেজাজ; সাইফের একের ভেতরে বহুগুন। ২২ গজে এমন প্রতিভার খোঁজেই তো বাংলাদেশ।

 

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়