সাউদি-বোল্টদের দিনে উজ্জ্বল সৌম্য-সাকিব
ইয়াসিন হাসান: প্রথম টেস্ট নেতৃত্ব দিতে নেমে কত কিছু হারালেন তামিম ইকবাল! না পেলেন টেস্ট ‘ব্লেজার’, না জিতলেন টস। হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে ‘অধিনায়ক’ তামিম ইকবাল ব্যাটেও রান পেলেন না। বাংলাদেশের নবম টেস্ট অধিনায়ক নিশ্চিত আজকের দিনটির কথা ভুলে যেতে চাইবেন। তামিম ভুলে যেতে চাইলেও বাংলাদেশ মনে রাখতে চাইবে ভিন্নভাবে।
প্রথমত দলের তিন তারকা ব্যাটসম্যান নেই, তারপরও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রান ২৮৯। দ্বিতীয়ত সৌম্য সরকারের ফিরে আসা, তৃতীয়ত সাকিব আল হাসানের ধারাবাহিকতা ও চতুর্থ অভিষিক্ত নুরুল হাসান সোহানের লড়াই। চারে মিলিয়ে ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দিন লড়াই করেছে বাংলাদেশ। দিনটি নিউজিল্যান্ডের হলেও লড়াকু বাংলাদেশের ব্যাটিং নজর কেড়েছে সবার।
শর্ট বল উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য সবসময়ই ভয়ংকর। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ২৮৯ রান করতে সবকটি উইকেট হারানো বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়েছে শর্ট বলে। তামিম, সাকিব ও সৌম্য সরকার আউটের ধরণ ছিল দৃষ্টিকটু! একটু দায়িত্ব নিয়ে খেললে স্বাগতিকদের মুখের হাসি কেড়ে নেওয়া যেত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে তামিম ইকবাল লেগ সাইডে ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন। ৫ রানে সাজঘরে দেশসেরা ওপেনার। ক্রিজে এসে মাহমুদউল্লাহ নজরকাড়া শটে মাঠ মাতিয়ে রাখেন। বড় ইনিংসের আশাও জাগিয়েছিলেন। কিন্তু বোল্টের অসাধারণ এক ইনসুইংয়ে আউট ১৯ রান করা মাহমুদউল্লাহ।
তৃতীয় উইকেটে বড় জুটি পায় বাংলাদেশ। প্রথম সেশনের বাকিটা সময় ও মধ্যাহ্ন বিরতির পর দাপট দেখান সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসান। দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ১২৭ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করেন। ইমরুলের পরিবর্তে জায়গা পাওয়ার আস্থার প্রতিদান দিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন। আগের ৩ টেস্টে সৌম্যর সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৭। প্রথম সেশনে ওই রান টপকে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেশনে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান রানে ফেরা সৌম্য। কিন্তু তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগার ছোঁয়া হয়নি তার। এজন্য নিজেকেই দুষবেন সৌম্য। বোল্টের সামান্য স্লো বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট কভারে ক্যাচ দেন। গ্র্যান্ডহোম ডাইভ দিয়ে ক্যাচ তালুবন্দি করতে ভুল করেননি। ১০৪ বলে ১১ বাউন্ডারিতে শেষ সৌম্যর ইনিংস।
সৌম্য আউট হওয়ার পর হঠ্যাৎ পথ হারায় বাংলাদেশ। ১৭ বলের ব্যবধানে আরও ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশ। সৌম্যসহ আউট সাকিব আল হাসান (৫৯) ও সাব্বির রহমান (৭)। ক্যারিয়ারের ২০তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে সাকিব সাউদির বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন। বোল্টের শর্ট বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন সাব্বির।
পথ ভুলতে বসা বাংলাদেশ ষষ্ঠ উইকেটে ঘুরে দাঁড়ায়। দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটার নুরুল হাসান সোহান ও নাজমুল হোসেন শান্ত বাংলাদেশকে টেনে নেন। দুজন ষষ্ঠ উইকেটে ৫৩ রান যোগ করেন। চা-বিরতির পরপর শান্ত ১৮ রানে সাজঘরে ফিরে গেলেও সোহান ব্যাট চালিয়ে যান। তবে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান। ৪৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। বোল্টের লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন সোহান। এ ক্যাচ দেওয়ার আগেও আরও তিনটি ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় বেঁচে যান। উইকেট রক্ষক এ ব্যাটসম্যান ৪৭ রানের ইনিংস খেলে অভিষেক টেস্টে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন। এর আগে ৪৪ রান করেছিলেন লিটন কুমার দাস।
২৭৩ রানে সোহান আউট হওয়ার পর রুবেল হোসেনের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের রান ২৮৯ এ পৌঁছে। রুবেল হোসেন ২১ বলে ৩ বাউন্ডারিতে করেন ১২ রান। ২২ গজের ক্রিজে ধৈর্যের পরিচয় দেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া কামরুল ইসলাম রাব্বী। সাউদির পঞ্চম শিকারে পরিণত হওয়ার আগে রাব্বী ৬২ বলে করেন ২ রান। সাউদি ষষ্ঠবারের মত সাদা পোশাকে ৫ উইকেটের স্বাদ পান। ট্রেন্ট বোল্ট অষ্টমবারের মত নেন ৪ উইকেট। ১ উইকেট নেন নেইল ওয়াগনার।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার পর ৫.৩ ওভার খেলার সুযোগ ছিল নিউজিল্যান্ডের। কিন্তু আম্পায়াররা স্বাগতিকদের আর মাঠে নামাননি।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জানুয়ারি ২০১৭/ইয়াসিন
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন