ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সাব-রেজিস্টার অফিসে হরেক রকমের দুর্নীতি-অনিয়ম

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫০, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাব-রেজিস্টার অফিসে হরেক রকমের দুর্নীতি-অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভূমি নিবন্ধন বা সাব-রেজিস্টার অফিসগুলোতে দুর্নীতি-অনিয়ম প্রতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধে এ সেবা খাতকে  জিডিটালাইজেশনের সুপারিশ করা হয়েছে ওই গবেষণায়। এছাড়া আইনী সংস্কার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিতকরণেরও সুপারিশ রয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।

ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন সোমবার রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করে টিআইবি।

সুপারিশে বলা হয়েছে, দলিল নিবন্ধন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আইনি ও পদ্ধতিগত সংস্কার ও আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ভূমি নিবন্ধন সেবা সহজীকরণ, জনবান্ধব এবং দুর্নীতিমুক্ত করতে এ সেবাকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটালাইজড করতে হবে। এজন্য ই-নিবন্ধন দ্রুত চালুর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সকল প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দিতে হবে।

হালনাগাদ রেকর্ড অব রাইটস বা কেন্দ্রীয় তথ্য ভান্ডার গড়ে তুলতে হবে; যা জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারের সাথে সমন্বিত থাকবে এবং প্রতিটি নাগরিকের ভূমির বিদ্যমান খতিয়ানের তথ্য প্রদর্শন করবে এবং ওই তথ্য ভান্ডারে সাব-রেজিস্টারদের তাৎক্ষণিক অভিগম্যতা থাকবে। 

এদিকে গবেষণায় দেখা গেছে, সাব রেজিস্টার অফিসগুলোতে অবকাঠামোগত ঘাটতি রয়েছে। বেশিরভাগ অফিস পুরনো ও জরাজীর্ণ। কাজের পরিধি অনুযায়ী নিয়োজিত লোকবলের তুলনায় কক্ষের অপ্রতুলতা রয়েছে। দলিলের রেকর্ড রুম তুলনামূলকভাবে ছোট এবং কক্ষগুলো স্যাঁতসেঁতে হওয়ায় পোকামাকড়ের উপদ্রবে গুরুত্বপূর্ণ নথি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাব-রেজিস্টার অফিসগুলোতে প্রয়োজনীয় লজিস্টিকসের সঙ্কটে ভুগতে হয়। এতে সেবাপ্রত্যাশীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।

দলিল নিবন্ধন সেবায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার বিষয়ে টিআইবির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক বরাদ্দের স্বল্পতা রয়েছে। এর ফলে কিছু ক্ষেত্রে সাব-রেজিস্টার অফিসের দাপ্তরিক ব্যয় মেটাতে দলিল লেখক সমিতির ওপর অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্ভরশীল হতে হয়; যা দুর্নীতির ঝুঁকি সৃষ্টি করে। 

‘ভূমি নিবন্ধন সেবা সংক্রান্ত কোনো ডাটাবেজ না থাকায় খোঁজা ও যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এতে নিবন্ধনের পর মূল দলিল ও এর নকল উত্তোলনে দীর্ঘসূত্রিতাসহ বিভিন্ন ধরণের হয়রানি সৃষ্টি করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জাল দলিল চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না।  এছাড়া সাব-রেজিস্টার অফিসগুলোতে কিছু ক্ষেত্রে কম্পিউটার থাকলেও এর কোনো কার্যকর ব্যবহার নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটও নেই। ’

দলিল নিবন্ধন সেবায় স্বচ্ছতা অনুসন্ধানে টিআইবি দেখেছে, নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪ অনুযায়ী নিবন্ধন কার্যালয়ের দৃষ্টিগ্রাহ্য স্থানে ১১ ধরণের বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শনের জন্য বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোথাও এটি মানা হয়না।  নিবন্ধন আইন-১৯০৮ অনুযায়ী অফিস প্রাঙ্গনে দালাল ও টাউটদের তালিকা প্রদর্শন ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও এর কোনো প্রয়োগ নেই।

সাব-রেজিস্টার অফিসগুলোতে জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে তদারকিতে ঘাটতি, কর্মকর্তা, কর্মচারিদের কার্যক্রম তদারকিতে ঘাটতি, আন্ত:প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি টিআইবির গবেষণায় পরিলক্ষিত হয়েছে।

এছাড়া গবেষণায় ভূমি নিবন্ধনে নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়; যা এক হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত, দলিলের নকল উত্তোলনে এক হাজার টাকা থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত, দলিল লেখক সমিতিকে ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।    

গবেষণায় গুণগত পদ্ধতি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে টিআইবি।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ সেপ্টম্বর ২০১৯/নূর/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়