ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সিলেটের সর্বকনিষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিলেটের সর্বকনিষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস শহীদ। সিলেটের সর্বকনিষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি। মাত্র তের বছর বয়সে দেশকে শত্রু মুক্ত করতে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৯৭১ সালে মো. আব্দুস শহীদ খোয়াই ৩ নম্বর সেক্টর থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধকালীন সহযোদ্ধাদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট ছিলেন বলে সকলে তাকে ‘ছোট শহীদ’ বলে ডাকতেন।

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে কালেঙ্গায় ‘এন্টি ট্যাঙ্ক মাইন’ লাগিয়ে পাকিস্তানী মেজর ইউসুফ খাঁনকে হত্যার মাধ্যমে পুরস্কৃত হন তিনি। যুদ্ধের সময় তিনি অনেক জায়গায় ‘রেকি’ (তথ্য সংগ্রহ) করতে যেতেন।

একবার শ্রীমঙ্গলে ‘রেকি’ করতে গিয়েছিলেন। সময়টা ছিলো রোজার ঈদের তিন দিন আগের।  এসময় পাকিস্তান রেলওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুস শহীদ ও তার সঙ্গে থাকা আরো চার মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল।

ধরিয়ে দেওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন। বাকি চারজনকে ঐ রাতেই মেরে ফেলেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী।

শুধু বয়স কম থাকায় তিনি বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন। কিন্তু সে রাতে পাকিস্তানী বাহিনীরা খুব প্রহার করেছিল। যার ফলে তিনি ডান কানে কিছুই শুনতে পেতেন না। তাছাড়া তার সকল দাঁত নড়ে গিয়েছিল। যা অসময়ে পড়ে যায়।  যুদ্ধকালীন তার সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কেএম শফিউল্লাহ এবং স্থানীয় কমান্ডার ছিলেন আইয়ুব আলী।

ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষ হলে তিনি সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এজাজ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে হবিগঞ্জ পিটিআই স্কুলে অবস্থান করেন। এবং হবিগঞ্জ পোদ্দার বাড়ি সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এজাজ আহমেদ চৌধুরীর কাছে অস্ত্র জমা দেন।

সিলেট জেলার বাহুবল উপজেলার কোর্টআন্দর গ্রামের এই বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মো. আব্দুস শহীদ ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবারে মৃত‌্যুবরণ করেন।

চলতি (২০১৯) বছরের ২৫ নভেম্বর সোমবার বিকেলে লস্করপুর রেলওয়ে গেইটের পাশে তার নামে এক স্মৃতি ফলক উদ্বোধন করেন ইউএনও আয়েশা হক।

আর ২ ডিসেম্বর কোর্টআন্দর সড়কটি এ বীরের নামে নামকরণ করা হয়। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এমপি দেওয়ান শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদের কন্যা হাবিবা ইসলাম তার বাবার কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পরেন। বাবা সম্পর্কে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন সিলেটের সর্বকনিষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে তার স্বরণে স্মৃতি ফলক ও সড়কের নামকরণ করা হয়েছে, এটা দেরিতে হলেও আমাদের জন‌্য গর্বের। আমরা চাই, এ অঞ্চলে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমার বাবার নাম যুক্ত করা হোক আর সরকারিভাবে গড়ে তোলা হোক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ পাঠাগার। এটা আমাদের প্রাণের দাবি।’

বাহুবল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবুল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মো. আব্দুস শহীদ কম বয়সে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তাই আমাদের তথ্যমতে তিনিই সিলেট অঞ্চলে কম বয়সি বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বরণে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। এক সড়কও তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। সে আমাদের স্মৃতির পাতায় রয়েছে। এটা আমাদের গর্বের। ‘

ইউএনও আয়েশা হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদের বাড়ি গিয়েছি। তার স্মৃতি জাগিয়ে রাখতে এক স্মৃতি ফলক ও সড়ক উদ্বোধন হয়েছে। ’



হবিগঞ্জ/মামুন/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়