সিলেটের ১৩ উপজেলা বন্যা কবলিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির জেরে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার ১৩ উপজেলার দুটি পৌরসভাসহ ৭৫টি ইউনিয়নের সাড়ে তিনলাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলার জনসাধারণ।
মঙ্গলবার নদ-নদীর পানি কিছুটা কমে আসায় অনেক স্থানেই পানি নামতে শুরু করেছে। তবে, নদীর পানি কিছুটা কমলেও প্লাবিত এলাকার পানি নামছে ধীর গতিতে। ফলে, কিছু সংখ্যক উঁচু এলাকা থেকে পানি নামলেও বেশিরভাগ অঞ্চলই প্লাবিত রয়েছে। এ কারণে পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, সন্ধ্যা ৬টায় আমলশীদ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি ১১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে শেওলা পয়েন্টে ৯০ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিলো। এছাড়া কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি ৯২ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং জৈন্তাপুরের সারী নদীর পানি সারী পয়েন্টে ৯৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এখনও বন্ধ রয়েছে গোয়াইনঘাট এবং কানাইঘাটের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পাঠদান বন্ধ আছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা বিভাগ। বন্ধ রয়েছে জাফলং, বিছানাকান্দি, ভোলাগঞ্জসহ সবকটি কোয়ারির পাথর উত্তোলন, ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক শ্রমিক।
পানিবন্দি জনসাধারণের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। এছাড়া শুকনো খাবার না থাকায় ত্রাণের অপেক্ষায় রয়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষ।
সিলেটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার সিলেটের উপ-পরিচালক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, পানি কমতে শুরু করায় নতুন করে এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা নেই । এখন পর্যন্ত বন্যায় ৬ হাজার ৪৫৬ টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৯৯৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯০টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ২ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫১টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বন্যায় ৪২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে; এর মধ্যে ১৬০টি বন্ধ রয়েছে। মোট ৩ হাজার ৮শ’৬৬ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে, এতে আমন বীজতলাসহ ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫টি স্থানে ভাঙনও দেখা দিয়েছে।’
বন্যা কবলিত এলাকায় জনসাধারণের মাঝে পানি বিশুদ্ধ করণের জন্য ৫৭ হাজার পিস ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। আরও দেড় লাখ পিস ট্যাবলেট মজুদও রয়েছে। তাছাড়া বন্যার্তদের চিকিৎসা দিতে সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে ১৪০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত ৬শ’মেট্রিক টন চাল, নগদ ৮ লাখ টাকা এবং তিনহাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৪৬ মেট্রিক টন চাল, ৪ লাখ টাকা এবং ২ হাজার পিস শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
রাইজিংবিডি/সিলেট/১৭ জুলাই ২০১৯/আব্দুল্লাহ আল নোমান/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন