সেই বৃদ্ধ মা বাড়ি ফিরছেন

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ছেলের হাতে নির্যাতিত ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া এলাকার আলোচিত সেই  বৃদ্ধ মা এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরবেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন।

সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খাইরুল কবির জানান, গত ১৬ আগস্ট ঠাকুরগঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল হরিপুর উপজেলা থেকে নির্যাতিত এই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেই থেকে হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর ওই বৃদ্ধা সুস্থ হয়ে ওঠেন। আশা করা হচ্ছে, আজ ওই বৃদ্ধ মা নিজের বাড়িতে ফিরে যাবেন।

ডা. শুভেন্দু ও ডা. তোজাম্মেল হোসেন জানান, বৃদ্ধা বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। চোখের উপরে আঘাতের কারণে সুস্থ হতে বেশি সময় লেগেছে।

বৃদ্ধার ছোট মেয়ে শরিফা বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সদের আন্তরিকতার কারণে আমার মা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তা ছাড়া ডিসি স্যার, সাংবাদিক ভাইরা নিয়মিত মায়ের খবর রেখেছেন। মায়ের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।

সুস্থ হয়ে ওঠার অনুভূতির কথা বৃদ্ধার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিসি আমাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে নতুন জীবন দিয়েছে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তিনি ওষুধ, প্রয়োজনীয় খাবারসহ সব কিছুই করেছে। শুনেছি আমার থাকার জন্য নতুন একটি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ । ডিসি আমার বড় ছেলের দায়িত্ব পালন করেছে। প্রতিটি মায়ের ঘরে যেন এমন সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। আল্লাহ তাকে আরো ভালো কাজ করার শক্তি দান করুক।

নির্যাতন করা বড় ছেলে দবির উদ্দিনের ওপর কোনো অভিযোগ আছে কি না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সন্তান যত বড় অপরাধ করুক না কেন, মায়ের কাছে তা কিছুই না। বৃদ্ধ বয়সে সে আমার দেখাশোনা করেছে। আমার ছেলে জেল খেটে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। পৃথিবীর সকল মায়ের সন্তানেরা ভালো থাকুক।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, বৃদ্ধ মা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ । আজ তাকে হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।  তিনি সুস্থ হওয়ার পেছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সংবাদকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি জানান, বৃদ্ধ মা নিরাপদে থাকার জন্য ইতিমধ্যে একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে আরো সহযোগিতা করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ আগস্ট দুপুরে ছেলের বউয়ের কাছে ভাত চেয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের শতবর্ষী তসলিমা খাতুন। এ কথা ছেলে দবির উদ্দিন জানতে পেরে লাঠি দিয়ে মাকে মারধর করেন। লাঠির আঘাতে তসলিমার বাম চোখ থেঁতলে যায়। পরদিন সকালে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল ওই বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

মাকে নির্যাতনের অভিযোগে ছেলে দবির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই রাতে উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বৃদ্ধা তার সন্তানের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই জানায় ও ছেলেকে দেখার আকুতি করলে আদালত দবির উদ্দিনের জামিন মঞ্জুর করেন।

রাইজিংবিডি/ঠাকুরগাঁও/২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭/তানভীর হাসান তানু/রুহুল/উজ্জল