সেই মুস্তাফিজ, এই মুস্তাফিজ!
মুস্তাফিজকে কয় ম্যাচের জন্য পাবেন? প্রশ্ন শুনে হাসলেন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে মুস্তাফিজের প্রথম কোচ ইমদাদুল বাশার রিপন। ওই হাসিতে যে রহস্য লুকিয়ে আছে, তা অজানা নয় কারোরই!
ইমদাদুল বাশারের হাত ধরেই ২০১৪-১৫ মৌসুমে জাতীয় ক্রিকেট লিগে খুলনার হয়ে অভিষেক মুস্তাফিজুর রহমানের। সৈয়দ রাসেল লিগের প্রথম দুই ম্যাচে পেলেন মাত্র দুই উইকেট। তৃতীয় ম্যাচে ইমদাদুল বাশার বাজিয়ে দেখলেন মুস্তাফিজকে। যুব দলের পেসার তখন মুস্তাফিজ। সাহস করে তার হাতে কোচ তুলে দিলেন লাল বল।
মিরপুরে অভিষেক রাঙালেন মুস্তাফিজ। প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট। পরের ইনিংসে ৪টি। এরপর টানা চার ম্যাচ খেললেন আজকের তারকা মুস্তাফিজ। খুলনার হয়ে পাঁচ ম্যাচে পেলেন ২১ উইকেট।
সেই মুস্তাফিজের কথা স্মরণ করতে গিয়ে ইমদাদুল বাশার খুলে দিলেন কথার ঝাঁপি, ‘আমি ওকে যখন বললাম তুমি খেলছ, লাফিয়ে উঠল। ওর ভেতরে চার দিনের ম্যাচ খেলার যে আগ্রহ দেখলাম, তা আমাকে টেনেছিল বেশ। আমার এখনো মনে আছে ও ৪ উইকেট পেয়েছিল। পরবর্তী ম্যাচগুলোতেও ভালো করেছিল।’
সেই মুস্তাফিজের সঙ্গে বর্তমান মুস্তাফিজের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। বর্তমান সময়ের সেরা পেসারদের একজন। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের মূল অস্ত্র। কিন্তু চার দিনের ম্যাচে মুস্তাফিজের ওই আগ্রহের সঙ্গে বর্তমান অবস্থার কোনো মিল নেই! এখন লাল বলের প্রতি মুস্তাফিজের অনাগ্রহ! গুঞ্জন রয়েছে, টেস্ট দলে তাকে না রাখতে নির্বাচকদের অনুরোধও করেছিলেন একবার!
এসব শুনে একটু আশ্চর্য হলেন ইমদাদুল বাশার, ‘আমি আসলে দীর্ঘদিন ওকে নিয়ে কাজ করছি না। কিন্তু চার দিনের ম্যাচের প্রতি ওর আগ্রহের কমতি ছিল না কখনোই। ওকে আমি যখন খেলাই তখন ও ম্যাচ খেলার জন্য ডিটারমাইন্ড ছিল।’
ভারত সফরের আগে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের জন্য জাতীয় লিগে খেলা বাধ্যতামূলক করেছে বিসিবি। তামিম, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকরা প্রথম দুই রাউন্ড খেলবেন, তা জানিয়ে দিয়েছেন। সেখানে মুস্তাফিজ কয় ম্যাচ খেলবেন, তা জানেন না খুলনার হেড কোচ। ‘আমি আসলে ওর অপেক্ষায় আছি। ও আসলে বোঝা যাবে’- বলছিলেন ইমদাদুল বাশার।
বলার অপেক্ষা রাখে না মুস্তাফিজের সিদ্ধান্তই এখানে প্রাধান্য পাবে। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা থেকে যশোরের বিমান ধরবেন মুস্তাফিজ। রাতে খুলনায় দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। বৃহস্পতিবার লিগের পর্দা উঠবে। বুধবার দলের সঙ্গে এক সেশন অনুশীলন করবেন বাঁহাতি পেসার। শোনা যাচ্ছে, মুস্তাফিজ জাতীয় লিগে এক ম্যাচ খেলতে রাজী হয়েছেন! জাতীয় দলের অন্য খেলোয়াড়রা দুই ম্যাচ খেললেও মুস্তাফিজকে খুলনা পাবে এক ম্যাচে। তবে তাকে দুই ম্যাচের জন্যই চান কোচ, ‘আমি তো চাইছি ও দুই রাউন্ডই খেলুক। ২৫ তারিখ ভারত সফরের ক্যাম্প শুরু। এর আগে সময় আছে পর্যাপ্ত।’
ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর খুব বেশি হাত ঘোরাননি মুস্তাফিজ। নেটে মুশফিককে সেন্টার উইকেটে বোলিং করতে দেখা গেছে। বাকিটা সময় ফিটনেস ট্রেনিং করেছেন। মঙ্গলবারও তাকে ফিটনেস ট্রেনিংয়ে দেখা গেছে একাডেমি মাঠে। শতভাগ ফিটনেস নিয়ে মাঠে নামার কথা। তবে বিসিবি থেকে এখন পর্যন্ত তাকে ব্যবহারের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
‘আমরা এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমরা তাই আমাদের পরিকল্পনা মতো ওকে খেলাব। ওয়ার্ক লোড আমার কাছে সবার জন্য সমান থাকবে। রুবেল, আল-আমিন ও মুস্তাফিজ আমার কাছে একই থাকবে। আমরা টুর্নামেন্টে ভালো করতে চাই। সবাইকে নিয়েই আমাদের পরিকল্পনা’- বলেন কোচ।
ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচগুলোতে মুস্তাফিজের অংশগ্রহণ অনিয়মিত। জাতীয় দলের ব্যস্ত সূচি, চোটের ধাক্কা মিলিয়ে অভিষেকের পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাকে পাওয়া গেছে সামান্য। অভিষেক মৌসুমের পর ছয়টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ মৌসুমে কোনো ম্যাচ খেলেনি। ২০১৭-১৮ মৌসুমে খুলনার হয়ে এক ম্যাচে ৩ উইকেট, ২০১৬-১৭ মৌসুমে জাতীয় লিগে কোনো ম্যাচ খেলেননি, বিসিএলে সাউথ জোনের হয়ে দুই ম্যাচে ৪ উইকেট এবং ২০১৫-১৬ মৌসুমে জাতীয় লিগে তিন ম্যাচে ১২ উইকেট পেয়েছেন।
তবে অনফিল্ডে মুস্তাফিজের নিবেদনের কোনো কমতি দেখেন না ইমদাদুল বাশার। এবারও তার একই প্রত্যাশা, ‘এক মৌসুম আগেও মুস্তাফিজ এক ম্যাচের জন্য খেলেছিল। আমি ওর নিবেদনে কোনো ঘাটতি পাইনি। আশা করছি এবারও দলের সঙ্গে এক হয়ে পারফর্ম করতে পারবে। ’
৩০ প্রথম শ্রেণির ম্যাচের মধ্যে মুস্তাফিজ টেস্ট খেলেছেন ১৩টি। ২৪.৭৪ গড়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার উইকেটসংখ্যা ৭৮টি।
ঢাকা/ইয়াসিন/পরাগ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন