ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘সেই হামলার ভিডিও যেভাবে কাজে লাগানো হয়’

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ২০ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সেই হামলার ভিডিও যেভাবে কাজে লাগানো হয়’

মাকসুদুর রহমান: আমাকে ধরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভিডিও দেখিয়ে এবং পুলিশের শেখানো কথা বলতে ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়।

কথাগুলো বলছিলেন সাজানো নাটকের শিকার জালাল উদ্দীন ওরফে জজ মিয়া।

মঙ্গলবার দুপুরে রাইজিংবিডির সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন বহুল আলোচিত এই ব্যক্তি। মহাখালীর একটি নির্জন জায়গায় বসে কথা বলার সময় তার চোখেমুখে ভয় আর অশান্তি পরিলক্ষিত হয়।

প্রশ্ন করা মাত্র জজ মিয়া বলেন, ‘আমি গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। অথচ আমাকে বানানো হলো ন্যাক্কারজনক গ্রেনেড হামলার মূল আসামি। ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগের একটি চায়ের দোকান থেকে আমাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। দেখানো হয় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভিডিও।’

‘পুলিশ বলে, তুই এই ভিডিও ভালভাবে দেখ। যাদের নাম বলবো সেই সব নাম মুখস্থ করে আদালতে বলবি। এ জন্য আমাকে টানা ৩০ দিন রিহার্সেল করানো হয়। তিনবার ক্রসফায়ারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলানোর ভয় দেখানো হয়। গায়ে গরম পানিও দেওয়া হয়। দিনের পর দিন চোখ, হাত-পা বেঁধে রাখা হতো। এক সময় আমি টিকতে না পেরে ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হই।’

গ্রেনেড হামলার তদন্তের তিন পুলিশ কর্মকর্তা আমার জীবন শেষ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এসপি রুহুল আমিন, এএসপি আব্দুর রশিদ ও মুন্সী আতিকুর রহমান বেশি নির্যাতন করেছেন। তারা টাকার লোভে এ কাজ করেছেন। কেননা সেই সময় সরকার হামলাকারিকে ধরতে এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। তারা আমার স্বীকারোক্তি নিয়ে ওই টাকা হাতিয়ে নেন।

‘তারা আমাকে ভয় দেখিয়ে শিখিয়ে দেন হামলার আগে তারা মগবাজারের তৎকালীন কাউন্সির মোখলেসুর রহমানের বাসার নিচে বসে বৈঠকে মিলিত হয়। পরে তিনটি গ্রুপ হয়ে মিস্টির প্যাকেটে গ্রেনেডগুলো নিয়ে যায়। তারা বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে।’
‘আর হামলার নির্দেশদাতা শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মসাসুদসহ আরও কয়েকজনের নাম এবং ছবি দেখিয়ে বলতে বলেন। ভয়ে আমি সেভাবেই আদালতে স্বীকারোক্তি দেই। একই সঙ্গে আমেরিকার কেন্দ্রিয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র কর্মকর্তাদের সামনেও একই ধরনের তথ্য দিতে বলেন তারা।’

এখন কোন আতঙ্ক আছে কি না? অবশ্যই আছে, কেননা ওই তিন কর্মকর্তার সাজা হলেও জামিনে আছেন। যেকোন সময় তারা আবার আমাকে বিপদে ফেলতে পারেন। এমনকি জীবনও নিরাপদ মনে করছি না। আগস্ট মাস আসলে আমার মধ্যে আতঙ্ক বেশি থাকে। মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন করে। এ কারণে আগস্ট মাসে আমাকে বাসাও বদল করতে হয়। রাস্তায় চলাফেরা করতেও ভয় করে।’

অপর এক প্রশ্নে জজ মিয়া বলেন, মামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে গ্রামের বাড়ির সব সম্পদ চলে গেছে। নামের কারণে হাসি-তামাশার পাত্র হয়ে আছি। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে এখন একটি চাকরি করি। মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন পাই। অথচ এত বড় ঘটনায় আমাকে অহেতুক জড়ানো হলো। গ্রেনেড হামলা মামলার প্রধান সাক্ষীও আমি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছি। অথচ রাষ্ট্র আমাকে এখনও এতটুকু সাহায্য করেনি। সরকারের অনেক কর্তা ব্যক্তির কাছে দিনের পর দিন ধর্না দিলেও তারা শুধু আশ্বাস দিচ্ছেন। অর্থের অভাবে ছোট বোন খুরশিদা আক্তারের বিয়েও দিতে পারছি না।’

নিজের বিয়ে হয়েছে কি না ? হ্যা, অনেক কষ্টে হয়েছে। কেননা আমাকে বড় সন্ত্রাসী বানানোয় কেউ মেয়ে দিতেন না। গত ২ বছর হলো সেনবাগেই নিজেদের মধ্যে বিয়ে করেছি। একটি সন্তান আছে। আমি চাই আমাকে নিয়ে যারা এ কাজ করেছেন তাদের সাজা দ্রুত কার্যকর করা হোক।’
 
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় দলটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। সে সময় দেশি-বিদেশি চাপের কারণে ঘটনা ধামাচাপা দিতে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়।

ভিডিও :


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ আগস্ট ২০১৯/মাকসুদ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়