ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সোনালী আঁশ ও বঙ্গবন্ধু

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ১৩ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সোনালী আঁশ ও বঙ্গবন্ধু

আসাদ আল মাহমুদ : স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। 

দেশে ফিরেই পাটকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিকাশের পরিকল্পনা করেন তিনি। 
এ কারণে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্টারপ্রাইজ (ন্যাশনালাইজেশন) অর্ডার ১৯৭২ (পিও-২৭) এর আওতায় সব পাটকল জাতীয়করণ করেছিলেন। 

বাংলাদেশের পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়। বিশ্ববাজারে এদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের একক আধিপত্য ছিল। রফতানি আয়ের শীর্ষ খাতও ছিল পাট। ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমলেও এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল পাট।

 ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ২৯৭ একর জমির ওপর আদমজী জুট মিলের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৫১ সালের ১২ ডিসেম্বর উৎপাদন শুরু হয় সেখানে। পরবর্তীর্তে সারা বিশ্বে আদমজী একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুর হয়ে উঠেছিল পাটশিল্পের অন্যতম কেন্দ্র। স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধু এ সেক্টরকে বিশেষ গুরুত্ব দেন।

পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের কৃষক অনেক পরিশ্রম করে পাট উৎপাদন করলেও তার ন্যায্যমূল্য পেত না। এ পাট থেকে আয়ের বড় অঙ্কের অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানিরা নিয়ে যেত। সেখানে বিভিন্ন ইমারত থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ নির্মাণ করা হতো। আর বঞ্চিত হতো এদেশের কৃষক। এ কারণে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ভেতর অসন্তোষ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।

অপরদিকে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগ করেছে, কারখানা ধ্বংস করে পাটশিল্পের ব্যাপক ক্ষতি করেছে, কলকারখানার যন্ত্রাংশ পাকিস্তানে পাচার করেছে। 

তাই দেশ স্বাধীনের পরে পাটশিল্পের উন্নয়নে পঞ্চবার্ষিক (১৯৭৩-৭৮) পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার শাসনামলে সাতটি পাটকলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে পুরনো কারখানাগুলো ব্যালান্সিং, মডার্নাইজেশন, রিনোভেশন অ্যান্ড এক্সপানশন (বিএমআরআই) করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি।

তার আগে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পঞ্চম দফা ছিল প্রদেশগুলো নিজেদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার মালিক হবে এবং এর নির্ধারিত অংশ তারা দেবে। অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের পাট থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার ন্যায্য দাবি উত্থাপিত হয়েছে এতে। 

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে সীমিত সাধ্যের মধ্যে বঙ্গবন্ধু পাট খাতসহ সবক্ষেত্রে যে উন্নয়ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন, তা প্রশংসার দাবিদার। এ সময় দেশে ৮৭টি পাটকল চালু ছিল। তার শাসনামলে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয় ছিল ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে শুধু কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে আয় হয়েছে ৩১ কোটি ৩১ লাখ ডলার। অর্থাৎ মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ এসেছে পাট থেকে।

১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরই) প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বিজেএমসি জনবলের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ সংস্থার প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক এবং ৫ হাজার ৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি নিযুক্ত রয়েছে। পরোক্ষভাবে তাদের মাধ্যমে প্রায় ৬০ লাখ কৃষি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এদেশের পাঁচ কোটিরও অধিক সংখ্যক মানুষ পাট ও পাটশিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর পাট খাতে নেমে আসে ভয়াভহ বিপর্যয়। লোকসানের কারণ দেখিয়ে নামমাত্র মূ্ল্যে ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেয়ার নামে পাট শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দেওয়া হয়। বিকল্প হিসেবে সিনথেটিক পণ্যের ছড়াছড়ির কারণে বাংলাদেশের পাট হারিয়েছে তার গৌরব। বর্তমানে ব্ঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটখাতের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ আগস্ট ২০১৯/আসাদ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়