ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘সৌভাগ্যবান জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী দেখতে পাচ্ছি’

তাপস রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সৌভাগ্যবান জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী দেখতে পাচ্ছি’

শেষ হলো ক্ষণগণনা। আজ থেকে শুরু হলো বহুল প্রতীক্ষিত জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ। এই ক্ষণগণনা শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ১০ জানুয়ারি থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন আজ ১৭ মার্চ থেকে আগামী বছর ১৭ মার্চ পর্যন্ত বছরটি উদ্‌যাপিত হবে মুজিব বর্ষ হিসেবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র এই বছরকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালন করবে। 

আজ জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দমুখর একটি দিন। এই দিনে ‘বঙ্গবন্ধু’খ্যাত এক তেজস্বী নেতার জন্ম হয়েছিল এই ভূ-খণ্ডে। তিনি আমাদের জাতির পিতা। দিনটি সাড়ম্বরে উদ্‌যাপনের জন্য নেওয়া হয়েছিল নানামুখী পদক্ষেপ। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে মুজিব বর্ষ পালনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এবং দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর জন্মশতবার্ষিকীর পূর্ব ঘোষিত অনুষ্ঠানে আনা হয় পরিবর্তন। জনস্বার্থে এই আনন্দ আয়োজন এখন সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে।  

এ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক যতীন সরকার বলেন, ‘আজ আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। বিষয়টি খুবই আনন্দের। দিবসটিকে আমরা উৎসাহের সঙ্গে পালন করতে চেয়েছিলাম। এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- জাতির জনককে আমরা হৃদয়ে ধারণ করেছি এবং এটিই গুরুত্বপূর্ণ।’

অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর যে ভালোবাসা, যে শ্রম, সেটিকে আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। যদিও নানাভাবে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে, এদেশে এখনো বিশ্বাসঘাতক রয়েছে। এই বিশ্বাসঘাতকদের এখনো পুরোপুরি চিহ্নিত করা যায়নি। আজ তাঁর জন্মদিনে বিশ্বাসঘাতকদের চিরতরে নিমূর্লের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়ার শপথ নিতে হবে।’

নিপীড়িত, নির্যাতিত একটি জাতির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিষয়টি স্মরণ করে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এ জাতির জন্য মহৎ এক অনুপ্রেরণা। তাঁর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল এদেশের প্রতিটি মানুষের মনের কথা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করলেন। স্বাধীন দেশে ফিরে এসে দেশকে নতুনভাবে এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা করলেন। এগিয়েও যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকরা তাকে থাকতে দিলো না। ওরা দেশকে আবার পিছিয়ে দিলো।’

তিনি বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। দেশকে ভালোবাসব। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন তার জন্য শ্রম দেব- বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে এই হোক আমাদের পরিকল্পনা।’  

এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান মহানায়কের অভিধা পেয়েছেন। এই দিনকে কেন্দ্র করে সাধারণ, প্রাজ্ঞজন, দেশবরেণ্য মানুষের উচ্ছ্বাস যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ থেকে সরে আসার মনোবেদনা। কথাসাহিত্যিক, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন অবশ্য একটি আবেগের বিষয়। এটিকে শুধু আবেগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। দেশে বর্তমানে যেগুলো চলছে- দুর্নীতি, পাপিয়া কাণ্ডসহ বিভিন্ন অন্যায়- এগুলো প্রতিরোধ করতে হবে। কারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত, কারা হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে- তাদের চিহ্নিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাংলাদেশের বাস্তবায়ন করতে হলে, সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে এ বিষয়গুলোকে সবার আগে দেখতে হবে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট রয়েছে। এদের প্রশ্রয় দিয়ে, এভাবে কখনো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়!’

তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই আগে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করতে হবে, সিন্ডিকেট চিহ্নিত করতে হবে, সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে যারা রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবাইকে কাজ করতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সফল হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম এ দেশের জন্য অনেক বড় একটি ঘটনা, জাতির বিরাট পাওয়া বলে মনে করেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে আমার বিশাল আকাশের মতো মনে হয়। আকাশ যেমন আমাদের মাথার উপর ছাদ হয়ে আছে, তেমনি বঙ্গবন্ধু আমাদের বাঙালি জাতির মাথার ওপর থাকা ছাদ, বটবৃক্ষের ছায়া। যারা জাতির জনককে হত্যা করেছে তারা একটি জিনিস ভাবেনি যে, বঙ্গবন্ধুকে হয়তো শারীরিকভাবে হত্যা করা যায়, কিন্তু তার চেতনাকে কখনো হত্যা করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু-কন্যা তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের উচিত তাঁর পাশে দাঁড়ানো। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সোনার বাংলা গড়ে তুলব।’

বঙ্গবন্ধুসহ যাঁরা এই জাতির জীবনে ভোর এনে দিয়েছিলেন, সেই সূর্যসন্তানদের উপজীব্য করে গত পাঁচ বছর একুশে গ্রন্থমেলায় পাঁচটি উপন্যাস লিখেছেন আনিসুল হক। ইতিহাসশ্রয়ী এই কথাসাহিত্যিক বলেন, ‘আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী দেখতে পাচ্ছি। এটি সত্যিই খুব আনন্দের! বঙ্গবন্ধু সবসময় এদেশের মানুষের কথা বলেছেন। দেশের জন্য ভেবেছেন। দেশের গরিব দুঃখীদের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। তিনি আমাদের একটি স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। আজকে তাঁর জন্মদিনে এই যেন হয় আমাদের অঙ্গীকার- আমরা সবাই দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য কিছু করব। তাদের মুখে হাসি ফোটাব।

 

প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আবু বকর ইয়ামিন

 

ঢাকা/শান্ত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়