ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘স্কয়ার স্টিক’ জীবনেরই মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে অনেক নারীর

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৬ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘স্কয়ার স্টিক’ জীবনেরই মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে অনেক নারীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা: স্কয়ার স্টিক বা বাম্বু স্টিক তৈরি করে পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছেন খুলনার অর্ধশতাধিক নারী।

এটি রপ্তানিযোগ্য হিমায়িত চিংড়ির ভিতরে ব্যবহার হয়ে থাকে। বাঁশের তৈরি এই স্টিক এক সময় চীন থেকে আমদানি করতে হতো। এখন হিমায়িত চিংড়ির সঙ্গে খুলনায় তৈরি স্কয়ার স্টিক বা বাম্বু স্টিক বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

বিদেশ নির্ভরতা কাটিয়ে স্কয়ার স্টিক এখন তৈরি হচ্ছে খুলনায়। ঘরে বসেই সাংসারিক কাজ কর্মের পাশাপাশি নারীরা এই স্টিক তৈরি করছেন। এতে একদিকে আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, অপরদিকে স্বাবলম্বী নারীরা স্বচ্ছলতার মাধ্যমে পরিবারে হাসি ফুটিয়েছেন। স্কয়ার স্টিক তৈরি করে জীবনেরই মোড় ঘুরে গেছে অনেক নারীর।

বর্তমানে প্রতিমাসে খুলনার বিভিন্ন হিমায়িত চিংড়ি কোম্পানিসহ দেশের বাইরের মৎস্য কোম্পানিতে প্রায় ৫লাখ স্কয়ার স্টিকের চাহিদা রয়েছে।

জানা গেছে, এই স্টিক তৈরি করে খুলনার এসব নারীরা এখন বাড়িতে বসে মাথাপিছু প্রতিদিন আয় করছেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে, পুঁজি সংকটে বিপুল চাহিদা মেটাতে পারছেন না ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা।

এমনই একজন উদ্যোক্তা রূপসা উপজেলার নিকলাপুর গ্রামের মনিরা সুলতানা। সব খরচ বাদে তিনি প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন। এ কাজের সঙ্গে তিনি আরো ৫০/৬০ জন নারীকে সম্পৃক্ত করেছেন।

মনিরা সুলতানা বলেন, ‘প্রথম দিকে এটি তৈরি করতে আমরা পরিবারের সদস্যরাই কাজ করতে থাকি। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা কম থাকায় এলাকার বেশ কয়েকজন নারীকে সম্পৃক্ত করি। বিভিন্ন সাইজ ও প্রকার ভেদে এক হাজার স্কয়ার স্টিক তৈরি বাবদ ৫০ থেকে ৭০টাকা দেওয়া হয় তাদের। ঘরে বসে জনপ্রতি প্রতিদিন ২শ’ থেকে আড়াইশ টাকা আয় করায় কাজের প্রতি আগ্রহও বেড়েছে এসব নারীদের।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে বিদেশে বাংলাদেশের চিংড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতিমাসে ৮/১০ লাখ স্কয়ার স্টিক সরবরাহ করেছি। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে চিংড়ি রপ্তানি কমে গেলেও এখনো প্রতিমাসে কমপক্ষে ৪/৫ লাখ স্কয়ার স্টিক সরবরাহ করছি। প্রতি হাজারে মূল্য হিসেবে কোম্পানি থেকে দেওয়া হয় ৬০০ টাকা। মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এর চাহিদা সব থেকে বেশি। দেশের কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মাছ কোম্পানিগুলোতেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ পর্যন্ত তিনবার একটি কোম্পানির মাধ্যমে রপ্তানি করেছি। দেশের তুলনায় হাজার প্রতি ৪০০ টাকা বেশি দাম পেয়েছি।’

তবে নিজের নামে আমদানি-রপ্তানি লাইসেন্স না থাকায় সরাসরি রপ্তানি করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।

স্টিক তৈরি সম্পর্কে মনিরা সুলতানা বলেন, ‘প্রথমে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাকা তল্লাবাঁশ কিনে এনে পুকুরের পানিতে জাগ দিয়ে রাখতে হয়। এরপর পানি থেকে তা তুলে চাহিদা মোতাবেক সাইজ অনুযায়ী খন্ড খন্ড করে কেটে আমি নিজেই চটা তুলে তা অন্যান্য নারীদের কাছে দেই। যা দিয়ে তারা এই স্কয়ার স্টিক তৈরি করেন। এরপর এটি রোদে শুকিয়ে প্যাকেট করে সরবরাহ করা হয়।’

তিনি বলেন, চীন থেকে যেসব স্কয়ার স্টিক আমদানি করা হয় তা ৩/৪ মাসে ঘুণে ধরে নষ্ট হয়ে যায়। দেশীয় বাশ জাগ দিয়ে তা দিয়ে এটি তৈরি করতে পারলে গুণগত মানও ভালো হয়। অপরদিকে দেশের টাকা দেশেই থেকে যাবে। এক লাখ স্কয়ার স্টিক তৈরি করতে অনেক টাকার বাঁশ কিনতে হয়। শ্রমিক খরচও মেটাতে হয়। কোম্পানিতে বিক্রির সাথে সাথে পেমেন্ট পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ এবং আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স দিলে বৃহৎ পরিসরে তার মাধ্যমে বহু সংখ্যক নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগও হতো।

এ ব্যাপারে ব্রাইট মাছ কোম্পানির এজিএম মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এখানকার তৈরি স্কয়ার স্টিক’র গুণগত মান ভালো। যে কারণে প্রতিটি কোম্পানিতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’

রূপসা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাহিরা খাতুন বলেন, ‘মনিরা সুলতানা একজন নারী উদ্যোক্তা নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আরো ৫০জন নারীকে স্বাবলম্বী করার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তা অভাবনীয়।’


রাইজিংবিডি/ খুলনা/২৬ জুন ২০১৯/ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়