ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্ত্রীকে হত্যা করে ১৫ টুকরো

হাসমত আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৩, ১৪ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্ত্রীকে হত্যা করে ১৫ টুকরো

হাসমত আলী, গাজীপুর : পারিবারিক কলহের জের এবং স্ত্রীর জমানো ৪০ হাজার টাকা ভোগ করার জন্য স্ত্রীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর মৃতদেহ বাথরুমে নিয়ে ১৫ টুকরো করেছে তার স্বামী।

পরে দুই দফায় দেহের খণ্ডিত ১০ টুকরো ট্রাভেল ব্যাগে করে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। বাকি ৫ টুকরো ফেলার সুযোগ না পেয়ে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারের পর স্বামী মামুন মিয়া (২৫) পুলিশের কাছে এভাবে স্ত্রীকে খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।

বুধবার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তার কর্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এক প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে মামুনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান। গ্রেপ্তার মামুন গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের বড়বাড়ি এলাকার ফজলুল হকের ছেলে।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশ ও শ্রীপুর থানা পুলিশ ঢাকার আগুলিয়া থানার কবিরপুর এলাকা থেকে মামুন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পোশাক কারখানা ছুটির দিনে সে সুমিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে পলিথিন, চাকু, তিনটি ট্র্যাভেল ব্যাগ ও ঘুমের ওষুধ কিনে আনে। সন্ধ্যায় হালিমের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তা খাইয়ে সুমিকে অচেতন করে। ওই রাত ১টার দিকে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে সুমির লাশ বাথরুমে নিয়ে চাকু দিয়ে কেটে ১৫ টুকরো করে।

পরদিন শুক্রবার ভোর ৬ টার দিকে মূল দেহ পলিথিনে পেঁচিয়ে একটি ট্র্যাভেল ব্যাগে ভরে কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ব্রিজ থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় হাত, পা ও মাথা একইভাবে ট্র্যাভেল ব্যাগে ভরে একই স্থানে গিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। একইভাবে ফেলার জন্য দেহের বাকি ৫ টুকরো পলিতে মুড়িয়ে ডেসিং টেবিলের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখে।

এদিকে সুমির বোন শনিবার সকালে ঘরের তালা ভেঙে নতুন তালা লাগানোর কারণে দেহের খ-িত ওই ৫ টি টুকরো সে নিতে পারেনি। পরে সে পালিয়ে যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান, নদীতে ফেলে দেয়া দেহের খ-িত অংশগুলো বুধবার দুপুর পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সবুর, গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আফজাল হোসেন, শ্রীপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, নিহত সুমি আক্তার (২০) নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার দেবকান্দা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ও তার স্বামী মামুন মিয়া শ্রীপুর উপজেলার মাস্টারবাড়ির গিলারচালা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। সুমি স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করত। আর মামুন ইলেকট্রিক মিস্ত্রীর কাজ করত।

সুমির বোন বৃষ্টি জানিয়েছেন, ঈদ করতে শুক্রবার বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল সুমির। শুক্রবার সকালে মামুন তার মাকে ফোনে জানিয়েছে সুমিকে সে বাসে তুলে দিয়েছে। বিকেলে সুমি বাড়িতে না পৌছলে মা বিষয়টি বৃষ্টিকে জানান। তারা বোনজামাই মামুনের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। শনিবারও সুমি বাড়িতে না পৌঁছলে বৃষ্টি সুমিদের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করেন। এ সময় বাড়ির লোকজন মামুনকে বড় ব্যাগ নিয়ে যেতে দেখেছে তবে সুমিকে দেখেনি বলে জানায়। পরে তিনি তালা ভেঙে ঘরের ভেতর দেখেন এবং বোনকে না পেয়ে নতুন তালা লাগিয়ে চলে যান। তিনি আরো জানান, শনিবার থেকে মামুনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বৃষ্টি জানান, ঈদের দিন সোমবারও সুমি বাড়িতে না পৌছলে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তিনি ফের বোনের ভাড়া বাড়িতে যান। ঘরের দরজা খুলতেই দুর্গন্ধ পেয়ে তল্লাশি করে ডেসিং টেবিলের ড্রয়ারে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মাংসের টুকরো দেখতে পান। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ মাংসের টুকরোগুলো উদ্ধার করে গাজীপুরে শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় সুমির পিতা নিজাম উদ্দিন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানার মামলা করেছেন।


রাইজিংবিডি/গাজীপুর/১৪ আগস্ট ২০১৯/হাসমত আলী/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়