ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

স্বদেশে ফিরে যেতে চায় ওরা

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বদেশে ফিরে যেতে চায় ওরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : নাছিমা বেগম, বাড়ি মিয়ানমারের মংডুর পোয়াখালী গ্রামে। প্রাণে বাঁচতে ডিসেম্বরের শেষের দিকে পাঁচ সন্তান নিয়ে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। এখন সন্তানদের নিয়ে তিনি দেশে ফিরে যেতে চান।

টেকনাফে লেদা বস্তিতে রাইজিংবিডিকে এসব কথা জানান নাছিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘মিয়ানামরের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেদেশের সেনা বাহিনী নির্যাতন করেছে। এ নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে রোহিঙ্গারা গ্রাম ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিস্থিতির কারণে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে করছে। আমিও সন্তানদের বাঁচাতে এপারে চলে আছি। কিন্তু আসার পর থেকে আমাদের থাকার ব্যবস্থা নেই, খাবারের ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে এসে লেদা বস্তিতে মিনারা বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের অবস্থা ভাল না। তাই আমাদের অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে বলেন। এখন পাঁচ সন্তান নিয়ে আমি দেশে ফিরে যেতে চাই। স্বামী ছিদ্দিক আহমেদ সেনাবাহিনীর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এপারে আসার পর তার সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছে।’

পালিয়ে এসে টেকনাফ লেদা বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া নূর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শুরুতে ছোট গজরবিল গ্রামে সেনারা নির্যাতন চালিয়েছিল। তখন পরিবারের পাঁচ সদস্যদের নিয়ে প্রাণে বাচঁতে এপারে পালিয়ে আসি। এরপর থেকে লেদা বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছি। খুব কষ্টের জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ আমরা এপারে এসে অনন্ত প্রাণে বেঁচে আছি। ওপারে হলে হয়তো এতদিনে মারা যেতাম। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে থেকে যদি আমাদের মিয়ানমারের সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তাহলে আমরা ওপারে চলে যাব।’

পথে পথে রোহিঙ্গা : কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পথে পথে এখন রোহিঙ্গা। তাদের দাবি, তাদের কাছে খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা করার মতো কোনো টাকা নেই। হ্নীলা ইউনিয়নে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা নারী রায়েবা খাতুন (৪৫) বলেন, কিছু টাকার আশায় এখানে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি।

নানা অপরাধে রোহিঙ্গারা : জীবিকার তাগিদে উখিয়া ও টেকনাফে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা।  ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে প্রায়ই রোহিঙ্গারা পুলিশ ও বিজিবির হাতে আটক হচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দারা।

 


রোহিঙ্গাদের বস্তি

 

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল মজিদ বলেন, ‘অপরাধীদের ধরার জন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। বিশেষ করে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে রোহিঙ্গারা ধরা পড়ছে।’

এ প্রসঙ্গে কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের অপারেশন কর্মকর্তা ডিকশন চৌধুরী বলেন, ‘নাফ নদীতে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা এখন দেখা মেলে না। কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে সেজন্য নদীতে টহল অব্যাহত রাখা হয়েছে।’

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, নতুন করে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবির সর্বোচ্চ নজরদারি আছে।

প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করে। সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাচঁতে নাফ নদী পার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। ইতিমধ্যে ৬৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবৈধভাবে ঢুকে পড়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়।



রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সুজাউদ্দিন রুবেল/উজ্জল/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়