ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্বপ্নের বাড়ি ফেরা যেন দুঃস্বপ্ন

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বপ্নের বাড়ি ফেরা যেন দুঃস্বপ্ন

হাসান মাহামুদ : গত এক বছরে দেশের মহাসড়কের সক্ষমতা প্রায় ৮ শতাংশ উন্নতি হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থার প্রতি প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যানজট আর সমন্বয়হীনতার কারণে এবারো ভোগান্তিতে পড়েছেন নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা যাত্রীরা।

 

ব্যস্ত নগরজীবনে সময় করে উঠতে পারেন না। তাই টানা ছুটি পেয়ে ঈদুল আজহায় বাড়ি ফিরছেন একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবরার আহমেদ। দুপুর ১২টায় গাড়িতে চড়েছেন গ্রামের বাড়ি মীরসরাই যাবেন। যখন তিনি সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহনের গাড়িতে চড়ছিলেন, তখন কথা হয় প্রতিবেদকের সঙ্গে। বিকেল ৫টায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তিনি তখন মাত্র ইলিয়টগঞ্জ পৌঁছেছেন। ৫ ঘণ্টার ভ্রমণের অভিব্যক্তি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসে বসে বসে পড়ছিলাম ‘‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি’। কিন্তু রাস্তায় গাড়ি চলার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্নে বাড়ি ফিরছি।’’

 

এদিকে আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যানবাহনের চাপ এবং নিয়ম না মেনে যানবাহন চলাচলের কারণে টানা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের স্থানে স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিধির দেওয়া তথ্য মতে, এই মহাসড়কে থেমে থেমে চলছে গাড়ি। ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাতায়াতে দুই ঘণ্টার পরিবর্তে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগছে। বিশেষ করে কাঁচপুর ব্রিজ থেকে শুরু করে মহাসড়কের সানারপাড়, মুগদাপাড়া, ভবেরচর, গজারিয়া, মেঘনা ও দাউদকান্দি গোমতী সেতুর উভয় প্রান্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

 

আর মাত্র কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে রাজধানীর চাকরিজীবীরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ঈদের সরকারি ছুটি হলেও শুক্রবারের কারণে কার্যত আজ থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। তাই সকাল থেকে বাড়তি চাপ সকল বাস কাউন্টারে। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকে ঘরমুখো মানুষের চাপই যেন বেশি। সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী, কিছু পরিবহনের সকালের সিডিউল করা গাড়ি এখনো কাউন্টারেই এসে পৌঁছায়নি।

 

গাবতলীতে সাকুরা পরিবহনের এসি বাসের কাউন্টার ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম বিকেলে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের কারণে উত্তরের কোনো গাড়ি সময় মত ছাড়া যাচ্ছে না। সকাল ১১টার সিডিউল করা গাড়ি ছেড়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। আর ১২টার সিডিউল করা বাস কখন ছাড়া সম্ভব হবে তা বলা যাচ্ছে না।’

 

এদিকে গতরাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আনারস বোঝাই ট্রাক ও পিকআপের সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন মহাসড়কে বিকল হয়ে পড়লে দুই ঘণ্টা পর তা সরিয়ে নেয় হাইওয়ে পুলিশ। কিন্তু ততক্ষণে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। সেই যানজটের প্রভাব এখন আরো বেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধির দেওয়া তথ্য মতে, এই মহাসড়কে ৩-৪ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৬-৮ ঘণ্টা। টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যানজট নিরসনে তারা কাজ করছেন। কিন্তু ঈদ পর্যন্ত এই ধাক্কা কমবে না বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।


রাজধানী থেকে রেলে বাড়ি ফেরার চিত্র আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ্ররই মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের স্রোত শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত রেলের সিডিউল বিপর্যয়ের সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে ঈদের তিনদিন আগেই কর্তৃপক্ষের ধারণার চেয়ে বেশি যাত্রী হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী। তিনি শুক্রবার বিকেলে রাইজিংবিডিকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ বাড়ছে। এই চাপ ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে। তবে এখন পর্যন্ত রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়া অন্য কোনো রেলের সিডিউল ঠিক থাকায় আমরা বাড়তি চাপে পড়িনি।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসতে বিলম্ব হওয়ায় ছাড়তেও দেরি হয়। ঈদ উপলক্ষ্যে কমলাপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন ছেড়ে যাচ্ছে ৬৯টি ট্রেন।

সদরঘাটে নৌপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়া যাত্রীদের ঢল নেমেছে। বাংলাদেশ অভ্য ন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ৯০টি লঞ্চ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ছেড়ে গেছে। যাত্রীর চাপ বেশ ভাল। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সারাদিন সদরঘাট থেকে ৯৪টি লঞ্চ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ছেড়ে যায়। আজ এরই মধ্যে সেই সংখ্যা কাছাকাছি পৌঁছেছে্। এ থেকেই যাত্রীর সংখ্যা এবং চাপ ধারণা করা যায়।

এদিকে ঈদের যাত্রা নিরাপদ করার জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে। আজ ৯ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাত দিন নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রম চলবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এলেনবাড়ির  সদর দপ্তরে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণকক্ষে যোগাযোগ করে জানা গেছে, শুক্রবার প্রথমদিনে বিকেল পর্যন্ত কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। তারা বলছেন সড়ক-মহাসড়কে যানজট, রাস্তার সমস্যাসহ ঘরমুখো মানুষের যে কোন সমস্যা কন্ট্রোল রুমে জানানো হলে পদক্ষেপ নেবে কর্তৃপক্ষ।  যোগাযোগের জন্য দুটো নাম্বারও (০১৯৬৬৬২২০১৯ ও ০১৭৩০৭৮২৯৪৬) দেওয়া হয়েছে কন্ট্রোল রুমের পক্ষ থেকে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬/হাসান মাহামুদ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়