ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্বাগত ২০২০

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাগত ২০২০

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

কালের আবর্তে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর। বহু ঘটন-অঘটনের বছর ছিল ২০১৯। ভোরের সূর্যোদয়ের মাধ্যমে আমরা পা রাখতে যাচ্ছি নতুন আরেকটি বর্ষপরিক্রমায়। স্বাগত ২০২০।

নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে ২০২০। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিধি বড় হচ্ছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের পরিচিতিও ফুটে উঠছে নতুন রূপে। নতুন বছরটিকে এই ধারা অব্যাহত রাখাসহ আরো সমৃদ্ধির আশা করছেন সবাই।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে ২০২০ সালকে জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর উল্লেখ করে বলেন, এবছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদযাপিত হবে। এ জন্য গোটা দেশবাসী উন্মুখ হয়ে আছে।

তিনি বলেন, নববর্ষ সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ-খ্রিস্টীয় নববর্ষে এ প্রত্যাশা করি।

নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে নতুন বছরের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে নতুন বছর সবার জীবনে অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করেন।

তিনি বলেন, ‘নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে নতুন বছরের। নতুন বছর অর্জন আর প্রাচুর্যের, সৃষ্টি আর কল্যাণে ভরে উঠুক এবং সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি-মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে এই প্রার্থনা করছি।’

সদ্য বিদায় নেয়া ২০১৯ সালের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল নতুন মন্ত্রিসভা গঠন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করে ৪৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা এবং চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বছরজুড়ে দুয়েকটি স্থান ছাড়া স্থানীয় সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় পেয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন।

দেশের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ায় ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বাংলাদেশে মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৯০৯ ডলার। এটি ২০১৮ সালে ছিল ১ হাজার ৭৫১ ডলার। আর এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। যদিও সদ্য বিদায়ী বছরে অর্থনীতির প্রধান প্রধান অধিকাংশই নিম্নমুখী ছিল। নতুন বছরে এই ধারা ইতিবাচক পর্যায়ে নিয়ে আসা সরকারের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে।

আবরার, নুসরাত, রিফাতসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ছিল সদ্য বিদায়ী ২০১৯ সালের আলোচিত ঘটনা। এসব ঘটনার অধিকাংশেরই চার্জশিট জমা হয়েছে। কোনোটার রায় হয়েছে। কোনোটি আপিল পর্যায়ে রয়েছে। নতুন বছরে এসব ঘটনার রায় কার্যকরের যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে।

সদ্য বিদায়ী বছরে প্রাণ ও সম্পদহানিতে অন্যতম ছিল কিছু অগ্নিকাণ্ড। একদিকে যেমন ঘটেছে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফআর টাওয়ারের মতো ভয়াবহ আগ্নিকাণ্ড, তেমনি বেড়েছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। ফায়ার সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে মোট ২২ হাজার ২৮৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। যা গত ২৩ বছরের মধ্যে অগ্নিদুর্ঘটনায় রেকর্ড। এসব ঘটনায় ১৫৪ জন নিহত ও ৩৭৭ জন আহত হয়েছেন।

নতুন বছরে এই অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ থাকছে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের জন্য।

২০১৯ সালের কোরবানির ঈদ হয়তো আলাদাভাবেই মনে রাখবেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। কারণ ২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার ভয়াবহ দরপতন ঘটে। ২০১৮ সাল থেকে দরপতন শুরু হলেও এমন ধস নিকট অতীতে আর দেখা যায়নি। এবার চামড়ার দাম ছিল স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ন। রাজধানীসহ সারা দেশেই সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ কমে চামড়া বিক্রি হয়। আর ছাগল ও ভেড়ার চামড়া তো বিক্রিই হয়নি। দাম না পেয়ে ক্ষোভে অনেক স্থানে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেন।

নতুন বছরে কোরবানির আগে থেকেই এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা সবার।

বিদায়ী বছরে বেশকিছু আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম ছিল ছেলেধরা আতঙ্কে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা। গত জুলাই মাসের শুরুতে হঠাৎই সারা দেশে গুজব ছড়িয়ে পড়ে- পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘ছেলেধরা’ আতঙ্ক তৈরি হয়। এরপর থেকেই ছেলেধরা সন্দেহে একের পর এক গণপিটুনির খবর আসতে থাকে।

এই গুজব এতটাই ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে যে, তা ঠেকাতে সেতু কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়। তারপরও ছেলেধরা গুজবে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে প্রাণ হারান অন্তত ৭ জন, আহত হন আরও অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে ঢাকার বাড্ডায় গত ২০ জুলাই উন্মত্ত জনতার হামলায় মারা যান নিরীহ গৃহবধূ তাসলিমা বেগম রেণু, যা দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করে।

আজ থেকে শুরু হওয়া ২০২০ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হতে যাচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিকীর মূল আয়োজন।

এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আরো নিবিড়ভাবে কাজ শুরু করবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাজ। এতে এরই মধ্যে মানসিকভাবে সমর্থন দিয়েছে দেশের মানুষ। কারণ নতুন বছরে এটাই থাকছে বাঙালির প্রত্যাশা- ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন > 


ঢাকা/হাসান/সাইফ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়