ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্বাধীনতা পূর্ণতা পেল ১০ জানুয়ারি : পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়

কবি স্বরলিপি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাধীনতা পূর্ণতা পেল ১০ জানুয়ারি : পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়

একাত্তর! সে সময় তো আমাদের একেবারে উন্মাদ অবস্থা! সত্তরের নির্বাচনের আগে ঊনসত্তরের আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। এর আগে সরাসরি ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। ঊনসত্তরের নির্বাচনে জেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছি। সত্তরের নির্বাচনে আমরা মাঠ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর হয়ে কাজ করেছি, আমরা জিতেছি। জেতার জন্য সম্মিলিতভাবে কাঠখড় পুড়িয়েছি।

এই যে সময়ের কথা বললাম, এর আগ পর্যন্ত ছিলো আমাদের স্বাধীনতা পাওয়ার প্রস্তুতিকাল। সময়টাকে যদি দুইভাগে ভাগ করি, তাহলে ৭ই মার্চের আগের সময় আর পরের সময় উল্লেখ করতে হয়। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণের পরই শুরু হলো যুদ্ধের প্রস্তুতি। ভাষণের পর আমি চলে যাই ফরিদপুর। সেখানে গিয়ে আমরা সংগঠিত হই। প্রায় দুই-তিন হাজার মানুষ একত্রিত হই। প্রশিক্ষণ নেই এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ২৫ মার্চ রাত্রে খবর পেয়ে গেলাম, ইতিহাসের বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ডের কথা। তারপর ১৪ই এপ্রিল ফরিদপুরে পাক মিলিটারি ঢুকল। এরপর নানা রকম কর্মকাণ্ডে যুক্ত হই। বিশেষ করে জনমানুষকে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করি।

আমরা যারা যুদ্ধের ময়দানে একত্রিত হয়েছিলাম, তাদের মধ্যে ১৩-১৪ বছরের কিশোরও ছিল। প্রচণ্ড সাহসী সব মানুষ। যারা দৃঢ়তার সঙ্গে লড়েছিল। তারা যেন অনন্য শক্তির অধিকারী। বলতে পারি ১৪ বছর বয়সী নওফেলের কথা। স্বাধীনতা পাগল নওফেল শহীদ হয়েছেন। আরও কত-শত নাম, বলতে গেলে সেতো অনেক কথা। সারা দেশে কোথায় কী ঘটছে তার খবর পেতাম বিবিসি, আকাশ বাণী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর খবর যখন শুনতাম ভেঙে পড়তাম। আবার যখন পাকবাহিনীর মৃত্যুর কথা শুনতাম, অপারেশন সাকসেস হওয়ার খবর পেতাম, তখন উৎফুল্ল হতাম। আমাদের সাহস বেড়ে যেত। মনে হতো এই তো স্বাধীনতার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছি। মনে হতো, স্বাধীনতা আসছে। সাহস যেন আমাদের মধ্যে মুহূর্তে সঞ্চারিত হয়ে যেত। আমরা আরও সংগঠিত হওয়ার শক্তি পেতাম।

তরুণ প্রজন্মকে বলতে চাই, ১৯৭১-এ জনযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছিলাম। সেই জনযুদ্ধে মুক্তিকামী সবার অংশগ্রহণ ছিল। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান; আদিবাসী (নৃ-গোষ্ঠী) সবাই যে যার জায়গা থেকে মুক্তির জন্য যুদ্ধে নেমেছিল। শেষের দিকে আমাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত রক্ত ধারাতেই স্বাধীনতা এসেছে। ১৬ ডিসেম্বর আমরা এক বাঁধভাঙ্গা আনন্দের উপলক্ষ্য পেয়েছিলাম। কিন্তু আনন্দ পরিপূর্ণরূপে উদযাপন করতে পারিনি। কারণ, আমরা তখনও জানার চেষ্টা করছিলাম বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন, নাকি মরে গেছেন! সঠিক খবর আমরা পেতাম না। এজন্য দেশের মানুষের, আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। অপেক্ষায় ছিলাম তার খবর জানার জন্য। অধীর অপেক্ষা ছিলো, তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য।

পরে আমরা জানতে পারলাম, বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন। তিনি পাকিস্তানের জেলখানায় আছেন এবং ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরবেন। সত্যি কথা বলতে কি- বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি যখন দেশে ফিরে এলেন, স্বদেশের মাটিতে যেন পরিপূর্ণ স্বাধীনতার ঢেউ আছড়ে পড়লো। ১৬ ডিসেম্বরে পাওয়া স্বাধীনতা পূর্ণতা পেল ১০ জানুয়ারি।

অনুলিখন: স্বরলিপি



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ডিসেম্বর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়