ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্মরণ: আণবিক গবেষণার পথিকৃৎ ওয়াজেদ মিয়া

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৯ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্মরণ: আণবিক গবেষণার পথিকৃৎ ওয়াজেদ মিয়া

একটা উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে সম্পদ অপ্রতুল সেখানে একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই জাতির জন্য সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে পারে- বলেছেন বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া।

তিনি ছিলেন দেশে আণবিক গবেষণার পথিকৃৎ। তিনি পরমাণু গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে দক্ষতা ও সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

এই মহান বিজ্ঞানীর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের ৯ মে তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬৭ বছর বয়সে মারা যান।

১৯৪২ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে জন্ম এই বিজ্ঞানীর। ছাত্রজীবনেও তিনি তুখোড় মেধাবী ছিলেন। মেধার কারণে তিনি একের পর এক সাফল্যের সঙ্গে সকল শিক্ষা বৈতরণী পার হন। যা সহপাঠিদের কাছে তার আলাদা পরিচয় তৈরি করে দেয়।

ওয়াজেদ মিয়ার ডাক নাম ‘সুধা মিয়া’। আপনজনরা ওই নামেই তাকে ডাকতেন। বাবা ছিলেন আব্দুল কাদের মিয়া, মা ময়জন্নেসা বিবি। ছোটবেলাতেই শিক্ষকদের দৃষ্টি কাড়েন তিনি। ১৯৫৬ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। সে বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে। ছিলেন ফজলুল হক মুসলিম হলে। সে সময়ই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা; ১৯৬১-৬২ শিক্ষা বছরে ফজলুল হক মুসলিম হলের ভিপিও নির্বাচিত হন। তখনই বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৬১ সালে স্নাতক, ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন তিনি।

এমএসসি পাশ করার পর ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে আণবিক শক্তি কমিশনে চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর দেশে ফেরার পর একই বছর ১৭ নভেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে তিনি বিয়ে করেন।

এই বিজ্ঞানী নিজেকে বিজ্ঞানের সঙ্গে নিবিড়ভাবেই জড়িয়ে ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা ছাড়াও ইতালির ট্রিয়েসটের  আন্তর্জাতিক পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে একাধিকবার গবেষণা করেছেন। তিনি গবেষণা করেছেন ভারতের পরমাণু শক্তি কমিশনেও।

বঙ্গবন্ধু হত্যা ট্র্যাজেডির পর গোটা পরিবারের হাল ধরেন ওয়াজেদ মিয়া। ৮১ সাল পর্যন্ত  নির্বাসিত জীবনে ভারতীয় পরমাণু শক্তি কমিশনের বৃত্তির টাকায় সংসার চালিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ চাকরি করেছেন পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান পদে। ১৯৯৯ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান ।

রাজনৈতিক বলয়ে থেকেও বিজ্ঞানী হিসাবে নিজের গবেষণা নিয়ে আলাদা জগৎ তৈরি করেছিলেন। আজ বাস্তবায়নের পথে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। বলা যায়, এটা তার প্রচেষ্টারই বাস্তবায়ন।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই পরমাণু বিজ্ঞানী তার জীবদ্দশায় আন্তরিকতা, প্রতিভা ও মানবিক গুণাবলী দিয়ে চারপাশের মানুষকে যেমন মুগ্ধ করেছেন, তেমনই ভালোবাসা ও দেশপ্রেম দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে জাতির জন্য কাজ করে গেছেন।

প্রতিবছর দিবসটি পালনে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সকল সহযোগি সংগঠন, মহাজোটের শরীক দলসমুহ এবং ড. এমএ ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন বিজ্ঞানীর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি, ফাতেহা পাঠ ও জিয়ারত, স্মৃতিচারণ, মিলাদ মাহফিল ও গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণসহ নানাবিধ কর্মসূচি পালন করে থাকে। এ বছর করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল আনুষ্ঠানিকতা স্থগিত করা হয়েছে। তবে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রদ্ধাঞ্জলিসহ ফাতেহা পাঠ ও জিয়ারতে বাধা দেয়া হবে না বলে জানান, প্রয়াত বিজ্ঞানীর ভাতিজা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ড. এম এ ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন পীরগঞ্জের চেয়ারম্যান একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল।

 

ঢাকা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়