সড়ক পরিবহন আইন আজ থেকে কার্যকর, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড
আজ শুক্রবার থেকে কার্যকর হচ্ছে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন। আইন ভঙ্গ করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে চালককে।
সড়ক পরিবহন আইনে শাস্তি-জরিমানার বিধান করে আইনে বলা হয়েছে, বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার মাধ্যমে গুরুতর আহত কিংবা প্রাণহানি ঘটালে চালককে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে কিংবা অর্থদণ্ড পেতে হবে। তবে তদন্তে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ড প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড। আর খুন না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন। লেন ভঙ্গ ও হেলমেট ব্যবহার না করায় অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোয় ছয় মাসের জেল ও ২৫ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ড। নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি চালানোয় ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ড। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোয় ছয় মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ড।
নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়ঃজ্যেষ্ঠ যাত্রীর জন্য সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনো যাত্রী বসলে এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।
মদপান করে বা নেশাজতীয় দ্রব্য খেয়ে গাড়ি চালালে, সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালালে, উল্টো দিকে গাড়ি চালালে, নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য স্থানে গাড়ি থামিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, চালকছাড়া মোটরসাইকেল একজনের বেশি সহযাত্রী উঠালে, মোটরসাইকেলের চালক ও সহযাত্রীর হেলমেট না থাকলে, ছাদে যাত্রী বা পণ্য বহন, সড়ক বা ফুটপাতে গাড়ি সারানোর নামে যানবাহন রেখে পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি, ফুটপাতের ওপর দিয়ে কোনো মোটরযান চলাচল করলে সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড এর বিধান রাখা হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণি পাস না করলে লাইসেন্স পাবেন না চালকরা। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে এক মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
আইনে সাধারণ চালকের বয়স আগের মতোই কমপক্ষে ১৮ বছর এবং পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা ৩ লাখ টাকা জরিমানা।
এর আগে, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে এতদিন আইনটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। নতুন এ আইনের বিভিন্ন ধারা বাতিলের দাবিতে তারা আন্দোলন করে। তাদের আন্দোলনের মুখে আইনটি সংশোধন করা হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনটি সংশোধন করা হয়নি। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আইনটি সংশোধনের বিষয়ে নাকচ করে দিলে অবশেষে আইনটি আলোর মুখে দেখে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৯ দিন আগেে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে আইনটি কার্যকরের আদেশ জারি করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ এর ধারা ১ এর উপ-ধারা (২) এ দেয়া ক্ষমতাবলে সরকার ১ নভেম্বর তারিখকে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করল।
২০১৭ সালের ২৭ মার্চ সড়ক পরিবহন আইনের খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। এরপর থেমে ছিল উদ্যোগ। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী আইনটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আইন মন্ত্রণালয় খসড়া আইনটি দ্রুত ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। অল্প সময়ের মধ্যে আইনটি সংসদেও পাস হয়। ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর গেজেট জারি করা হয়।
এরমধ্যে চলতি বছর আইনটি বাতিলের দাবিতে আন্দো লনে নামে পরিবহন শ্রমিকরা। দুর্ঘটনা ঘটালে চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডসহ অন্যান্য কারাদণ্ড এর শাস্তি কমানো, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে চালককে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাসের জায়গায় পঞ্চম শ্রেণি পাস এবং সড়ক সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ করলে চালক যেন জামিন পায় ইত্যাদি দাবিতে ধর্মঘটসহ আন্দো লন চালিয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী সাধারণ। শ্রমিকদের আন্দোলন, সড়ক আইন বাস্তবায়নসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সড়ক বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ নির্ধারণ ও বাস্তবসম্মত সমাধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উপ-কমিটি করা হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর উপ-কমিটির সঙ্গে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাদের সুপারিশে সার্বিক বিবেচনায় পরে আইনটি সংশোধন না করে ১ নভেম্বর থেকে কার্যকরের আদেশ জারি করে সরকার।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/নাসিম
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন