ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সড়কে শৃঙ্খলা: জমজমাট আলোচনা হলেও রাস্তায় ফল নেই

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সড়কে শৃঙ্খলা: জমজমাট আলোচনা হলেও রাস্তায় ফল নেই

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস রুট রেশনালাইজেশন বিষয়ক কমিটিসহ নানা উদ‌্যোগ নিয়ে জমজমাট আলোচনা হলেও কোন ফল পায়নি নগরবাসী।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করে বাস রুট রেশনালাইজেশন বিষয়ক কমিটি গঠন করেছিল সরকার।

কমিটি গঠনের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও কার্যকরভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। এমনকি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা চালুর বিষয়ে কমিটিকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেটিও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

ফলে সড়কে শৃঙ্খলা না ফেরার পাশাপাশি গণপরিবহনে গণভোগান্তি এখনো রয়ে গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে কোম্পানিভিত্তিক বাস চলাচলের বিষয়ে বাস রেশনালাইজেশন কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল। তবে অদৃশ্য কারণে এটি এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।

তবে, যানজট কমাতে গুলশান ও হাতিরঝিল এলাকার মতো ধানমন্ডি ও উত্তরা এলাকায় চক্রাকার বাস চালু করেছিল ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। শুরুর দিকে ধানমন্ডি ও উত্তরা এলাকায় চক্রাকার বাস প্রশংসা কুড়ালেও অল্পসংখ্যক বাস এবং একই রুটে অন্য কোম্পানির বাস চলাচলের কারণে কার্যত এ সেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন যাত্রীরা।

বাস্তবায়ন হয়নি গণপরিবহনে টিকিট ব্যবস্থা:

গত ২০ মে বাস রুট রেশনালাইজেসন সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে আহ্বায়ক সাঈদ খোকন বলেন, টিকিট কোনো যাত্রী বাসে যাতায়াত করতে পারবেন না। এ লক্ষে দুই সিটি করপোরেশন, বিআরটিসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ টিকিট বুথ স্থাপন করবে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে যাবে।

কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের পর রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় টিকিট ছাড়া গণপরিবহনে যাত্রীদের যাতায়াতে সুযোগ দিচ্ছে পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলো।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধুমাত্র বনানী-গুলশান, হাতিরঝিল, মতিঝিল-উত্তরা রুটের ঢাকার চাকা, গুলিস্তান-নারায়ণগঞ্জগামী কয়েকটি পরিবহন, মতিঝিল থেকে সাভারগামী একটি পরিবহন ছাড়া সব বাসই চলে টিকিটি ছাড়া। বিআরটিসির ডিপো থেকে বাস ছাড়লে সেখানে টিকিট বিক্রি হয়। কিন্তু সড়কের বিভিন্ন স্টপেজ থেকে যাত্রী তুললেও সেখানে টিকিটের কোনো ব্যবস্থা নেই।

এর অধিকাংশ বাসই সড়কের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাত্রীরা উঠানামা করে। মানহীন এসব বাস সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, রাস্তা আটকে যাত্রী তোলাসহ নানা অভিযোগ থাকলেও শুধু মামলার ভয়ে সড়কে পুলিশ সার্জেন্টের উপস্থিতি দেখলে এসব গাড়ি গেটলক করে রাখে।

অথচ বাস রেশনালাইজেশন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাধ্যতামূলক গেট লক রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

সড়কে হাতে গোনা বিআরটিসির বাস

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির তৃতীয় বৈঠকে ঘোষণা এসেছিল বিআরটিসির আমদানি করা ৬০০ বাসের মধ্যে সাড়ে ৪০০ বাস ঢাকার সড়কে চালানো হবে। সেখানে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত, শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ও দ্বিতল বাস থাকবে।

ঘোষণার পর ধারণা করা হচ্ছিল, এতে যাত্রী দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে। তবে মাঠে এ সিদ্ধান্তের কোনো ফল দেখা যায়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকায় চলাচল করা বাসের মধ্যে বেশিরভাগই পুরাতন। নতুন বাস চোখে পড়া দায়। বাসগুলোর অপরিচ্ছন্ন। প্লাস্টিকের সিটগুলো ভাঙা, ফোমের সিটগুলো ছেড়া।

এবিষয়ে বিআরটিসির কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিআরটিসির মোহাম্মদপুর ও কল্যাণপুর বাস ডিপোতে গিয়ে কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ বিআরটিসি বাস চলে চুক্তিতে। কিছু বাস সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের স্টাফ বাস ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ‘বিশেষায়িত’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে সাধারণ যাত্রীদের সেবায় কোনো এগুলো কোনো কাজে আসছে না।

রফিকুল ইসলাম নামে এক চালক বলেন, পুরাতন বাসগুলোই চালাতে হচ্ছে। নতুন যেসব বাস এসেছে সেগুলো চক্রাকার বাস হিসেবে উত্তরা, ধানমন্ডি এলাকায় চালানো হচ্ছে। অন্যান্য রুটগুলোতে পুরাতন বাসগুলো চলছে।

ভিন্ন চক্রাকারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা

রাজধানীর শংকরে চক্রাকার বাসের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক সময় পর পর একেকটি বাস আসে। কিন্তু ৫ মিনিট পর পর বাস আসার কথা ছিল। বাস আসতে আসতে কখনো কখনো ১০-২০ মিনিট দেরি হয়। এ কারণে টিকিট কিনে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে বিআরটিসি বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আগে থেকেই যাত্রী ভরে আছে। ফলে নতুন করে যাত্রী উঠতে সমস্যা হয়। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এসব গাড়ির ভেতরে চলাচলের জায়গা ছোট থাকায় যাত্রীদের দাঁড়িয়ে যেতে সমস্যা হয়।

বনানী-গুলশান চক্রাকার বাসে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর একটি করে বাস ছেড়ে যাচ্ছে। টিকিট কিনে যাত্রীদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না। ভেতরে বসার জায়গা থাকার পরও পর্যাপ্ত দাঁড়ানোর জায়গা থাকে। তবে নির্ধারিত সময়ের পর পর গাড়ি ছাড়ায় দিনের বেশিরভাগ সময়েই যাত্রীদের দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয় না।

অন্যদিকে হাতিরঝিল চক্রাকারও দেখা গেছে, সময় মতো গাড়ি ছাড়ার প্রবণতা রয়েছে। এছাড়া গাড়ির ভেতরে দাঁড়ানোর জায়গা বেশি থাকায় অনেক যাত্রী এক সাথে যাতায়াত করতে পারেন।

৬ কোম্পানিতে বাস: দেখেনি আলোর মুখ

ছয়টি কোম্পানির মাধ্যমে ২২ রুটে বাস চালানোর কথা বলা হলেও এখনো এ সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখেনি।  বিষয়টি নিয়ে প্রথম পরিকল্পনা করেছিল আনিসুল হক।

সূত্র জানিয়েছে, এখনো ছয় কোম্পানির মাধ্যমে ঢাকায় বাস চালানের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীর বিষয়টি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে বাস মালিকরা কতটা সহযোগীতা করবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

তবে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি জানিয়েছিল, দ্রুত এটি চালু করা হবে। এছাড়া, কমিটি গঠনের আগে বলা হয়েছিল আনিসুল হকের পরিকল্পনা অনুয়ায়ী এটি যেন বাস্তবায়ন করা হয়।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বাস রেশনালাইজেশন কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র জানিয়েছে, সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে সোমবার বসা ওই বৈঠকে থেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

 

ঢাকা/নূর/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়