ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হতাশ সোনালি আঁশে সোনালি স্বপ্ন দেখা কৃষক

তানভীর হাসান তানু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হতাশ সোনালি আঁশে সোনালি স্বপ্ন দেখা কৃষক

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা: এবার পাট চাষ করে হতাশ ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক। স্বল্প খরচে উৎপাদন ও দাম বেশি পাওয়ার যে সম্ভাবনাকে সামনে রেখে পাটের আবাদ করেছিলেন, সে আশা পূরণ হয়নি তাদের।

একদিকে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার পাটের ফলন ভালো হয়নি। অন্যদিকে দাম কমে যাওয়ায় সোনালি আঁশে সোনালি স্বপ্ন দেখা কৃষক এখন হতাশ।

ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা বলছেন, পাটের ন্যায্যমূল্যে থেকে এ বছরও তারা বঞ্চিত। নতুন পাট বাজারে ওঠার সাথে সাথে যশোরাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে দাম আগের চেয়ে মণপ্রতি ৫ শ’ থেকে ৬ শ’ টাকা কমে গেছে। পাটের দাম কম হওয়ায় তাদের বিঘাপ্রতি প্রায় চার হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। ধারদেনা করে চাষ করা পাট এখন তাদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে জানা গেছে, গত মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ের ৫ উপজেলায় ১৫ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা হয়। এ বছর তা বেড়ে ১৭ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে।

কয়েক বছর ধরে ধান আবাদে লোকসান হওয়ায় এবং পাটের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষক পাট চাষে ঝুঁকে পড়েন। তবে এ বছর চরম বৈরী আবহাওয়ার কারণে একদিকে যেমন পাটের ফলন কম হয়েছে, অন্য দিকে পানির অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়ে কৃষকেরা অস্বস্তিতে ছিলেন। এরপরও চাষিরা আশা করছিলেন পাটের ন্যায্যমূল্যে পাবেন তারা। কিন্তু নতুন পাট বাজারে তোলার পর তারা চরম হতাশ হচ্ছেন দাম নিয়ে। নতুন পাট বাজারে ওঠার আগে পাটের দাম মণপ্রতি দুই হাজার থেকে ২২ শ’ টাকা থাকলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪ শ’ থেকে ১৩ শ’ টাকায়। ফলে মণপ্রতি দাম কমেছে ৬ থেকে ৭ শ’ টাকা।

পাট ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর নতুন পাট ওঠার সময় পাটের বাজার পড়ে গেছে। স্থানীয় বাজারে পাটের সরবরাহ থাকলেও আড়তদার ও ব্যবসায়ীর তা কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে প্রান্তিক কৃষকেরা পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এছাড়া পাটকল বন্ধ থাকায় পাটের চাহিদাও কমে গেছে। তাই সোনালি আঁশের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে দ্রুত দেশের সব পাটকল চালু করতে হবে। বন্ধ করতে হবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। আর এজন্য মণপ্রতি পাটের মূল্য তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।

সদর উপজেলার আঁকচা গ্রামের পাটচাষি মনোয়ার  জানান, একবিঘা জমিতে পাট চাষ, বীজ বপন, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ সর্বসাকুল্যে খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। অথচ প্রতি বিঘায় পাটের ফলন হয়েছে ৮ থেকে ১০ মণ। বর্তমানে প্রতিমন এক হাজার ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফলে বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদেরকে।

তিনি বলেন, এমনিতেই ধান আবাদে লোকসান করেছি। এখন পাট আবাদেও লোকসান হবে। পাওনাদাররা আর ছাড়ছে না।

আরেক কৃষক হাসান বলেন, ‘কৃষি ঋণ আর দাদন নিয়ে চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। গত বছর প্রথম দিকে পাটে দাম ভালো ছিল। ভেবেছিলাম এবারো ভালো দাম পাব। কিন্তু পাটের দাম এবার কম। ১৩০০ টাকায় পাট বিক্রি করলে উৎপাদন খরচ উঠবে না। বাজার দর ছাড়া ১০০ টাকা কমে দাদন মালিককে পাট দিতে হবে। এবার কৃষক শেষ।’

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ‘চলতি বছরে যশোরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট আবাদ হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটের ফলন ও জাগ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো কোনো এলাকায় সমস্যা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত কৃষক তার ক্ষেতের পাট ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।’

বাজারে বর্তমানে দাম কম হলেও কয়েক দিনের মধ্যে দাম বাড়বে বলেও দাবি করেন তিনি।


রাইজিংবিডি/ ঠাকুরগাঁও/৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯/তানভীর হাসান তানু/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়