ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হবিগঞ্জে বালু উত্তোলনে বানরের কলা খাওয়া চলছে

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৭ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হবিগঞ্জে বালু উত্তোলনে বানরের কলা খাওয়া চলছে

জেলার চুনারুঘাট ও বাহুবলে বালু উত্তোলন নিয়ে এক পরিবেশ প্রেমিক বানরের কলা খাওয়ার গল্প শোনালেন। তিনি বলেন, বানর এক সাথে পুরো কলার ছড়া খেতে পারে না। তাই সে কৌশল নেয়। আস্তে ধীরে ছড়া থেকে একটি করে কলা খায়। একসময় পুরো ছড়ার কলা শেষ হয়। এ গল্পটি ভালোভাবে জানেন অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে তারা প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন। তারপরেই বালু উত্তোলনে নামেন।

অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা বানরের মতো ধীরে ধীরে চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি টিলা, ছড়া ও নদী থেকে নানা কৌশলে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করছেন। কিছু দিন চুরি বন্ধ থাকলেও স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে না।

মাঝে মধ্যে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন কঠোর হন। পাইপ ও ড্রেজার মেশিন জব্দ করে পুড়িয়ে দেন। বালু চোরদের দণ্ডও দেয়া হয়। কিন্তু অসাধুদের নগদ টাকা দিয়ে আবারো শুরু করেন ড্রেজার মেশিন তাণ্ডব। এ তাণ্ডবে পড়ে পাহাড়ি টিলা ও ছড়া আর নদীগুলো রূপরেখা হারিয়ে বিপন্ন হচ্ছে।

সূত্র জানায়, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠায় হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখানে প্রশাসন অভিযান চালালে থামে। অভিযান শেষ হলেই আবারো শুরু হয় বালু উত্তোলন।

এর মধ্যে চুনারুঘাটের পানছড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাহাড়ি টিলা কেটে অবাধে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বেহাল হয়েছে ওই এলাকার রাস্তাঘাট। শুধু তাই নয়, টিলা কেটে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে আশ্রয়ণ এলাকাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ। পানছড়ি আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের রঘুনন্দন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত।

জানা গেছে, আশ্রয়ণ এলাকার প্রায় টিলায় ড্রেজার মেশিন স্থাপন করেছে বালু উত্তোলনকারীরা। এই মেশিনের পাইপ টিলার নিচে প্রবেশ করিয়ে রাখা হয়। আর এর মাধ্যমে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। তারপর ট্রাক্টর বোঝাই করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বালুর স্তুপগুলো। বিক্রির সুবিধার জন্য বালু রাখা হচ্ছে বদরগাজী এলাকায়।

একইভাবে লালচান্দ বাগান এলাকার ছড়া ও টিলা থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। আর এতে করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি। বালু উত্তোলনকারীরা খুবই প্রভাবশালী। তাদের প্রভাবের কাছে এখানকার সবাই দুর্বল।

পরিদর্শনকালে নাম প্রকাশে ইচ্ছুক কোনো তথ্যদাতা পাওয়া যায়নি। এর কারণ হচ্ছে, বালুর তথ্য প্রদানকারীর জীবনে নেমে আসতে পারে চরম বিপর্যয়। তাই ভয়ে কেউ নাম প্রকাশ করে কোনো তথ্য দিতে নারাজ। বালু উত্তোলন হওয়া এলাকার বাসিন্দারা রীতিমতো আতঙ্কিত।

নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয়রা বলেন, ২০০০ সালে প্রায় ৫০ একর জমিতে এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি ৫০০ পরিবার নিয়ে যাত্রা করে। টিলায় টিলায় তাদের বসবাস। এরপর থেকে তারা জ্বালানি কাঠ (লাকড়ি) বিক্রি, সবজি চাষ, গাড়ি চালকসহ বিভিন্ন পেশায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা ছাড়াও এ পাহাড়ে আরো বহু পরিবার বসবাস করছেন।

তারা জানান, এ চক্রের সদস্যরা এখানকার পাহাড়ি এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক ড্রেজার মেশিন স্থাপন করে রেখেছে। এগুলো দিয়ে প্রতিদিন টিলা ও টিলার আশপাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলন করায় অনেক স্থানে টিলা এখন পুকুর হয়ে গেছে। আরো বহু টিলা রয়েছে হুমকিতে। সময় সুযোগে চুনারুঘাট উপজেলার মুড়িছড়া, শ্রীবাড়ি এলাকাসহ পাহাড়ি এলাকার স্থানে বালু উত্তোলন চলছে।

একইভাবে বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি এলাকার ভবানীপুরের একটি টিলার নাম ‘সেগুন টিলা’। এখানের টিলায় ছিল সেগুন গাছ। এখন সেগুন গাছ নেই। আর কীভাবে থাকবে, এখানের সেই টিলাই নেই। টিলাগুলো কেটে বালু মাটি বিক্রি করায় এ স্থানে বিশাল বিশাল গর্ত দেখা দিয়েছে। পরিদর্শনকালে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে।

একইভাবে জেলার মাধবপুর ও নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় টিলা ও নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।

সূত্র জানায়, জেলার পাহাড়ি এলাকায় টিলা ও ছড়ায় শত শত ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করছে। অনেক সময় প্রশাসনের অভিযানকালে বালু ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যান। লুকিয়ে ফেলা হয় মেশিনগুলো। পরে আবার মেশিন চালু হয়।

এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আরডিসি মাসুদ রানা জানান, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন কঠোর ভূমিকা পালন করছে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। হবেও না। একই কথা বলছেন বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিগ্ধা তালুকদার। 


হবিগঞ্জ/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়