ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

হবিগঞ্জের পাহাড়ি টিলায় মন ধাঁধানো রিসোর্ট

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৭ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হবিগঞ্জের পাহাড়ি টিলায় মন ধাঁধানো রিসোর্ট

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পাহাড় টিলা চা বাগানে ঘেরা হবিগঞ্জে পর্যটকদের মুগ্ধ করছে দি প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট।

চারদিকে পাহাড় আর সবুজের সমারোহ, এই রিসোর্টটি ঠিক তারই মাঝখানে। প্রতিদিন দেশ-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠছে রিসোর্টটি।

রিসোর্টটির অবস্থান হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অদূরে। উপজেলার পুটিজুরী বাজার থেকে দুই কিলোমিটার অতিক্রম করে বৃন্দাবন চা-বাগানের পাশের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করা যাবে এ রিসোর্টে।

চা-বাগান পেরিয়ে রিসোর্টের অভ্যর্থনা ভবনের পূর্বে প্রবেশমুখে এলে অভ্যর্থনাকারীরা আপনাকে স্বাগত জানাবেন। তবে এখানের সকল নিয়মনীতি মেনে প্রবেশ করতে হবে। যদিও এখানে প্রতিরাতে অবস্থান করতে কমপক্ষে ১২ হাজার, উপরে লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। এসব জেনে প্রবেশ করা ভাল।

পরিদর্শনকালে প্রবেশমুখে এসব বিষয়ে আলাপকালে রিসোর্ট কর্মচারী জানান, এখানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না।

প্রবেশ করেই যেদিকে চোখ যাবে সবুজ আর সবুজ। প্রায় ১৫০ একর জমিতে শুধু পাহাড়ি উঁচু উঁচু টিলা । টিলায় টিলায় ভবন। এখানে রয়েছে নানা প্রজাতির ৩০ হাজার গাছ। প্রকৃতি যেন নিজের হাতে সাজিয়েছে এ পরিসরটুকু।

এখানের একেকটা পাহাড়ের চূড়ায় একেকটা ভিলা, পাঁচ তারকাসুবিধা সমেত। পাখি ডাকা, ছায়া ঘেরা পরিসরটুকুতে ২৩টা ভিলা রয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে আরো ভবন নির্মাণ হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের ভাবনা, রিসোর্টটি কি করে আরও আকর্ষণীয় তোলা যায়।

এখানে ঘরের জানালায় কিংবা বারান্দায় বসে দেখা যায় পাহাড়, সবুজ বৃক্ষ, দুটো বড় লেক। সুদৃশ্য বহুতল ভবন, প্রধান টাওয়ার। টাওয়ারে থাকার জন্য আছে ১০৭টা রুম। পুরোটা রিসোর্ট ঘরের জানালা দিয়ে দেখে শেষ করা যাবে না। গাড়ি নিয়ে পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখতে হবে।

 

 

এখানকার ব্যবস্থা নিখুঁত আর আন্তরিক। চারটা বড় সভাকক্ষ, ৪০০ জনের ব্যাঙ্কুয়েট হল, ছোটদের খেলার জায়গা তিনটা, বিলিয়ার্ড, ফুটবল, বাস্কেটবল, টেনিস, রিমোট কন্ট্রোল কার রেসিংয়ের ব্যবস্থা। দুটো সুইমিংপুল, একদিক থেকে জলধারা এসে পাহাড়ের গা বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে, এটাকে বলে ইনফিনিটি পুল। দুটো সিনেপ্লেক্স, থ্রিডি সিনেমা দেখারও ব্যবস্থা আছে। প্রধান টাওয়ার, সুইমিং পুল, শিশুদের খেলার জায়গা, লাউঞ্জ, এমন স্থাপত্যশৈলীর দেখা মেলে এ রিসোর্টে। ঝুলন্ত সেতু ও থাকার জন্য ভিলাতো রয়েছেই।

চমৎকার নির্মাণশৈলীর শীতাতপ মসজিদ আছে নিরালায়। হেলিকপ্টার নামার হেলিপ্যাড আছে তিনটা, নিজস্ব হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে এখানে আসা যায়। লেকে মাছ ধরাসহ করা যায় বোটিং। আর তার পাশে আছে ক্রিকেটারদের নেট প্র্যাকটিসের জায়গা আর বাচ্চাদের ইনডোরস জোন।

এক বেড, দুই বেড, তিন বেডের ভিলাগুলোয় এসে রাত কাটান। টাকা খরচ করে মনকে আনন্দ দেন। টেলিভিশন, ওয়াই-ফাই, ফোন তো থাকবেই এমন রিসোর্টে। ডাইনিং ভবন আছে অনেকগুলো। লেকসাইড ক্যাফে নস্টালজিয়া, ভিলা ক্যাফের নাম রেগুলেশন, ফাইন ডাইন রেস্তোরাঁর নাম সায়গন, অল ডে ডাইন হচ্ছে অলিভ। অ্যারাবিয়ান খাবার এলাকা সিসা লাউঞ্জ। ইতালিয়ান, মেক্সিকান, ইন্ডিয়ান, কন্টিনেন্টাল, ভিয়েতনামি খাবার এবং আন্তর্জাতিক বুফে।

এখানে দিনের সৌন্দর্য্যে যেমন সবুজের মুগ্ধতা, তেমনি রাতের রূপও মোহনীয়-স্বর্গীয়।

রিসোর্টটি পরিবেশবান্ধব, প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে করা। তাজা সবজির চাষ হচ্ছে বাগানে, কত ধরণের ফলগাছ যে আছে! ঝাঁকা ঝাঁকা সবুজ লেবু বা কাঁঠাল ফলছে। কোনো গাছ কাটা হয়নি, বরং অনেক গাছ নতুন করে রোপণ করা হচ্ছে। চিত্রশালা আর পাঠাগারও রয়েছে এই রিসোর্টে।

নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি থেকে বাঁচতে অনেকেই বিদেশে যান। দেশের মধ্যে একটা সবুজ স্বর্গ প্রকৃতি আর স্বপ্নবান মানুষেরা মিলে রচনা করেছেন, সেখানে একটিবার যাওয়া যেতে পারে।

ঢাকা থেকে বাসে, ট্রেনে, গাড়িতে, হেলিকপ্টারে আসা যাবে। ঢাকা থেকে এলে তো দূরত্ব বেশি নয়, কিন্তু যানজটের পথে গাড়িতে চার ঘণ্টা লাগবে ধরে নিয়ে বের হওয়াই ভালো।

হবিগঞ্জ প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এ রিসোর্টটি ব্যক্তিমালিকানাধীন কিন্তু তারা পরিবেশবান্ধব রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন। চালু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে এ রিসোর্টটি দেশ-বিদেশে পর্যটন খ্যাতি অর্জন করেছে।



হবিগঞ্জ/মোঃ মামুন চৌধুরী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়