ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে থমকে আছে সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে থমকে আছে সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা

নব্বই দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের চির সবুজ নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার ২১ বছর পার হলেও মামলার বিচার শেষ হয়নি।

১৬ বছর যাবৎ মামলার ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় থমকে আছে বিচার কাজ। মামলার বিচার কবে শেষ হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাকির হোসেনের আদালতে মামলার নথি আলমারি বন্দি হয়ে আছে।

১৯৯৮ সালের এই দিনে (১৮ ডিসেম্বর) বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলিতে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

ঘটনার দিনই নিহতের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে শুধু আদনান সিদ্দিকীকে আসামি করা হয়।

১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী এজাহারনামায় আসামি আদনান সিদ্দিকীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটের অপর আসামিরা হলেন, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন।

আসামিদের মধ্যে ইমন কারাগারে এবং বোতল চৌধুরী পলাতক ও আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ সাত আসামি জামিনে।

২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এরপর ২০০৩ সালের মামলাটি বিচারে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

কিন্তু আসামিদের মধ্যে একজন হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দাখিল করেন। ওই রিট আবেদনে হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এম.এ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন।

পরে ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করেন। কিন্তু গত ১৬ বছরে ওই রুলের নিষ্পত্তি না হওয়ায় নিম্ন আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। আলোচিত মামলার নথি ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আলমারি বন্দি।

সোহেল চৌধুরীর স্ত্রী নায়িকা দিতি ২০১৬ সালের ২০ মার্চ মারা যান। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত দিতি মামলার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতেন। জানা যায়, তাদের দুই সন্তান দেশের বাইরে থাকেন। একারণে তারা বাবা হত্যার বিচারের জন্য ততটা তৎপর না।

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার ইমরুল ইসলাম জানান, ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত পাওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। স্থগিতাদেশের জন্য আসামিদের হাজিরাও দিতে হয় না।

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর সৈয়দ শামছুল হক বাদল বলেন, ‘মামলাটির চার্জ গঠনের পর এক আসামির পক্ষে হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এজন্য মামলার কার্যক্রম স্থগিত প্রায় ১৬ বছর। আমরা হাইকোর্টের দিকে তাকিয়ে আছি। হাইকোর্টের ওপরে তো আমরা কিছু করতে পারি না। তবে এ মামলা ট্রাইলে আসা উচিত। এতদিন একটি মামলা স্থগিত থাকলে পরবর্তীতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে আসলেও মামলার অভিযোগ প্রমাণ করতে অসুবিধা হয়। কারণ সাক্ষী মারা যেতে পারে, আলামত নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং সাক্ষীদেরও ঠিকানায় নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই যতো দ্রুত সম্ভব স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে এ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

বনানী জামে মসজিদের পাশে আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় বান্টি ইসলাম ও বোতল চৌধুরী মালিকানাধীন ট্রাম্পস ক্লাব অবস্থিত। ওই ক্লাবে অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। বিশেষ করে নিয়মিত মদ্যপান, মহিলাদের অশ্লীল নৃত্য চলতো। ক্লাবের এ ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের বিরোধিতা করেছিলেন সোহেল চৌধুরী। সোহেল চৌধুরী বনানীর মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে এ ধরনের অসামাজিক কাজ বন্ধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই ক্লাবের মধ্যে এক বান্ধবী নিয়ে সোহেল চৌধুরীর সাথে আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে তর্ক হয়। উত্তেজিত হয়ে নায়ক সোহেল চৌধুরী আজিজ ভাইকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সেদিন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে হত্যার চেষ্টাও চালায় সোহেল চৌধুরী।

এ দুটি ঘটনার পর আসামিরা সোহেলকে হত্যার পরিকল্পনা  করে। হত্যার দিন সোহেল রাত একটার দিকে বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢুকার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তোফাজ্জল হোসেন তাকে ঢুকতে না দেওয়ায় তখন তিনি চলে যান। সেদিন রাত আড়াইটার পর সোহেল ফের ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করলে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক আব্বাস ও আদনান সিদ্দিকী সোহেলকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।



ঢাকা/মামুন খান/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়