ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হানিমুন শেষে না-ফেরার দেশে

গাজী হানিফ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০২, ১৭ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হানিমুন শেষে না-ফেরার দেশে

নরসিংদী সংবাদদাতা : ঈদের এক সপ্তাহ আগে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার সঙ্গে বিয়ে হয় ব্যবসায়ী ইমরান হোসেনের। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ঈদ উদযাপনের পর তারা  হানিমুন যান সিলেটে। হানিমুন শেষে মাজার জিয়ারত করে এই নবদম্পতি ঢাকায় ফেরার পথে বাসের চাপায় একসঙ্গে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কারারচর এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে নবদম্পতিকে বহনকারী প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারান চারজন। সাদিয়া-ইমরান দম্পতি ছাড়াও সাদিয়ার দুই বন্ধুও নিহত হন। সাদিয়াসহ তিন বন্ধু বেসরকারী মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আহত হয়েছেন আরও চারজন। মুমূর্ষু অবস্থায় আহত চারজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

নিহতরা হলেন, প্রাইভেটকারের যাত্রী ঢাকার মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার (২৬), তার স্বামী ইমরান হোসেন (৩৫),বান্ধবী জান্নাত রাইসা (২৫) ও বন্ধু আকিবুল হাসান (২৭)। নিহত সাদিয়া আক্তার বগুড়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ে। তার স্বামী ইমরান নোয়াখালীর আবু হানিফের ছেলে। তিনি ঢাকায় ডেকোরেটরের ব্যবসা করতেন।

হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, বিয়ের পর মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার হানিমুন করতে সিলেটে গিয়েছিলেন। হানিমুন ও মাজার জিয়ারত শেষে রাতে বন্ধুদের সঙ্গে প্রাইভেটকারে করে সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। প্রাইভেটকারটি শিবপুরের কারারচর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক ঢাকা থেকে আসা সিলেটগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারে থাকা নবদম্পতিসহ চার যাত্রী মারা যান।

খবর পেয়ে ইটাখোল হাইওয়ে পুলিশ,ফায়ার সার্ভিস নরসিংদী ও শিবপুরের চারটি ইউনিট দুর্ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে। আহত অবস্থায় বাস ও প্রাইভেটকারের আরও পাঁচ যাত্রীকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। আহতদের মধ্যে চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনার খবর শুনে সকালে জেলা হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহতের স্বজনরা। নিহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাদিয়া আক্তারের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মাসের ৬ তারিখ সাদিয়ার ও ইমরানের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ঈদের ছুটিতে তারা গত চারদিন আগে হানিমুন ও মাজার জিয়ারত করতে বন্ধুদের নিয়ে সিলেট যায়। ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। পুলিশের কাছ থেকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তারা হাসপাতালে এসেছেন।

নিহতের মা রহিমা বেগম বলেন, মাত্র ১০ দিন আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। হাতের মেহেদির রং এখনো মুছে যায়নি। এর আগেই দুর্ঘটনা আমার মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে। আমি এখন বাঁচবো কি করে?

মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর শিক্ষার্থী সুজন বলেন, মাত্র কিছুদিন আগে ইমরানের সঙ্গে আমাদের সহপাঠী সাদিয়া আক্তার সাথীর বিয়ে হয়। জান্নাত রাইসা ও আকিবুল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার তারা ঈদের ছুটিতে সিলেট গিয়েছিল। আসার পথে এই মর্মান্তিক মৃত্যু।

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাইভেটকারে তিনজনকে আটকা অবস্থা দেখতে পাই। তাদের উদ্ধার করার পর দেখা যায়, তারা মারা গেছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রাইভেটকারটি ওভারটেকিং করতে গিয়ে বাসের সঙ্গে লেগে যায় এবং ঘুরে যায়। তখন বাসটি একেবারে প্রাইভেটকারের ওপর দিয়ে চলে যায় এবং খাদে পড়ে যায়।

ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান বলেন, মূলত বেপরোয়া গতিতে পাশ কাটাতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ।

 

রাইজিংবিডি/নরসিংদী/ ১৭ আগস্ট ২০১৯/ গাজী হানিফ মাহমুদ/ সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়